দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় আবিষ্কৃত তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে দুটিতে এখনও উৎপাদন শুরু হয়নি। আড়াই দশক আগে আবিষ্কৃত একটি গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে সক্ষমতার অর্ধেক। এ অঞ্চলে প্রায় সোয়া ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুত আছে। চলমান জ্বালানিসংকটের মধ্যে ভোলার গ্যাস ব্যবহার করে নতুনভাবে শিল্পাঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ভোলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিসিকের উদ্যোগে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে, বড় উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্প এলাকা এবং বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) করার চিন্তা চলছে। এর পাশাপাশি একটি সার কারখানা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল ও শেলটেক এখানে বিনিয়োগ শুরু করেছে। শেলটেকের সিরামিক কারখানা ২০১৯ সালে উৎপাদন শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার ভোলা সফরে যাচ্ছেন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। সফরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমানও উপস্থিত থাকবেন।
ভোলার গ্যাস ব্যবহার নিয়ে সরকারের দুই বিকল্প ছিল—একটি হলো পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস বাইরে সরানো এবং দ্বিতীয়টি হলো এলএনজি করে জাহাজে আনা। পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে, এবং ডিসেম্বরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভোলার গ্যাস চাহিদা তেমন বেড়ে ওঠেনি। সিলিন্ডারে ভরে জেলার বাইরে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে, যা পরিকল্পনার তুলনায় কম আসে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ভোলার গ্যাসের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিন ধরনের শিল্প এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মানুষদের ব্যাপক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নতুন শিল্পকারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভোলায় বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কম দামে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ও ভাবা হচ্ছে।
নতুন শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা, পুরোনো কারখানায় ৩০ টাকা। ভোলায় নতুন শিল্পগ্রাহকদের প্রতি ইউনিট ৩০ টাকায় গ্যাস সরবরাহের চিন্তা করা হচ্ছে, যা পেট্রোবাংলার ক্ষতি করবে না।
ভোলার ১৯৯৫ সালে আবিষ্কৃত শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২০০৯ সালে উৎপাদন শুরু হয়। ২০১৮ সালে আবিষ্কৃত ভোলা নর্থ এবং ২০২৩ সালে আবিষ্কৃত ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র থেকে এখনও উৎপাদন শুরু হয়নি। গ্যাস উৎপাদন করছে বাপেক্স, এবং সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তা ভোক্তাপর্যায়ে সরবরাহ করছে।
প্রাণ-আরএফএল ভোলায় সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকায় এক হাজার একর জমিতে ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শিল্পপার্ক গড়ে তুলতে চায়, যা ২৫ হাজারের বেশি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি করবে। এতে মূলত ভোলার গ্যাস ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। নির্মাণশ্রমিকসহ এ বছরের মধ্যে দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে, এবং আগামী বছর উৎপাদন শুরু হবে।
ভোলার শিল্পপার্কে উৎপাদিত পণ্যগুলোর মধ্যে থাকবে পাইপ, ফ্লোটার, ইনজেকশন মোল্ডিং, চেয়ার, পানির ট্যাংক, টেবিল, দরজা, খেলনা, ফুটওয়্যার, সিরামিক ও গ্লাসওয়্যার। এগুলো দেশের বাজারে বিক্রি হবে এবং রপ্তানি করা হবে। পণ্য পরিবহনে নদীপথ ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পায়রা ও মোংলা বন্দরে সহজভাবে পণ্য পৌঁছাতে সহায়ক হবে।

