বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে চীনা সহায়তায় বাংলাদেশ ডিজিটাল অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা চীন কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর এনডিবি প্রকাশিত ‘ডিজিটাল চায়না ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে এসেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার। এ ব্যবস্থায় চীন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আমদানির উৎস। পোশাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তিপণ্য, বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও ভোক্তাপণ্যসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের নির্ভরতা চীনের ওপর ব্যাপক। যদিও রপ্তানি এখনো তুলনামূলকভাবে সীমিত, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা বেড়েছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য, পাটজাত সামগ্রী ও ওষুধ খাতে বাংলাদেশ ভালো ফলাফল দেখাচ্ছে।
২০২০ সালে চীন বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা ঘোষণা করে। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা চীনা বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছে। হুয়াওয়ে, শাওমি, অপো ও ভিভোসহ চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প বাস্তবায়নে চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এখন একটি বাস্তব অর্থনৈতিক মডেল। চীনের প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বাংলাদেশের শিল্পায়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়ক। প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, দেশে এখনও অনেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে শুধু লেখালেখি, ছবি তৈরি বা চ্যাটবটের সঙ্গে সীমাবদ্ধভাবে ভাবেন। তবে এআই শিল্প, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় নিরাপত্তায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। চীনের এআই বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য একটি কার্যকর ও অনুসরণযোগ্য মডেল হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ গড়তে এখন থেকেই একটি সুসংগঠিত, গবেষণাভিত্তিক ও প্রয়োগমুখী এআই কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাধর্মী এআই ল্যাব স্থাপন, কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে একটি জাতীয় এআই কাউন্সিল বা টাস্কফোর্স গঠন সময়োপযোগী। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘এআই স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করতে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্স অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। স্কুল পর্যায় থেকে প্রোগ্রামিং ও কোডিং শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশে শক্তিশালী এআই ট্যালেন্টপুল গড়ে তোলা উচিত, যারা গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
চীনের টেনসেন্ট বাংলাদেশে গেম শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আগ্রহী:
এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গেম শিল্পে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এই শিল্পের বিকাশে ডিজিটাল অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশের গেম ও ডিজিটাল খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী চীনের অন্যতম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট।
টেনসেন্টের এপিএসি অঞ্চলের হেড অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ইয়ে লার লাউ বলেন, “গেম কেবল বিনোদন নয়, এটি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক সংযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের তরুণ ও প্রযুক্তি-সচেতন জনগোষ্ঠী এবং দ্রুত উন্নয়নশীল ডিজিটাল অবকাঠামো গেম শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রস্তুত। আমরা দেশের গেম ও ডিজিটাল খাতের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। এটি দেশের অর্থনীতি ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।” বাংলাদেশ ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এ বি এম হামিদুল মিসবাহ বলেন, “বাংলাদেশের গেম শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। সঠিক নীতি, বিনিয়োগ এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এর পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারি।”
টেলিকম খাতে চীনের প্রভাব:
বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামোর বড় অংশ চীনা প্রযুক্তিনির্ভর। মোবাইল নেটওয়ার্কের যন্ত্রাংশ, ফাইবার অপটিক, সিসিটিভি ক্যামেরা, এমনকি সরকারি তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পেও হুয়াওয়ে ও জেডটিইর ভূমিকা বিশাল। বাংলাদেশের বেশিরভাগ টেলিকম কোম্পানি (গ্রামীণফোন ব্যতীত) চীনা সরঞ্জাম ব্যবহার করে। এছাড়া সরকারি নিরাপত্তা অবকাঠামো, স্মার্ট সিটি প্রকল্প এবং ডেটা সেন্টারেও চীনা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো যেখানে ৫জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ে বর্জন করছে, সেখানে বাংলাদেশ চীনা প্রযুক্তি গ্রহণে তুলনামূলকভাবে উন্মুক্ত। চীনা প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের সহায়তায় বাংলাদেশ ডিজিটাল অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করছে। গেম ও টেলিকম খাতের এই সহযোগিতা দেশের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
সাশ্রয়ীমূল্যে স্মার্টফোন ও ইভি খাতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশে:
বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে চীনা ব্র্যান্ডের দাপট দিন দিন বাড়ছে। অপো, টেকনো, রিয়েলমি, ভিভো ও শাওমি দেশের মধ্যবিত্ত ও তরুণ প্রজন্মের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। সাশ্রয়ীমূল্য, আকর্ষণীয় ডিজাইন, ভালো ক্যামেরা ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি—এই চার বৈশিষ্ট্য চীনা ব্র্যান্ডগুলোকে জনপ্রিয় করেছে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে চীনা ব্র্যান্ডের প্রভাব আরও গভীর হয়েছে। দেশে স্মার্টফোন অ্যাসেম্বল করার ফলে পণ্যের মূল্য কমেছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং সরকার রাজস্বও বেশি আদায় করতে পারছে। এটি দেশের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।
ইলেকট্রিক গাড়িতে চীনা প্রভাব:
চীনের ইলেকট্রিক গাড়ি খাত বাংলাদেশে দ্রুত গতি পাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালে বিশ্বের বৃহত্তম ইভি নির্মাতা শেনজেনভিত্তিক বিওয়াইডি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রথম মডেল বাজারে আনার পর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত দ্বিতীয় শোরুম চালু করেছে ঢাকায়। বিওয়াইডির সিলায়ন ৬ মডেল এক চার্জে ১ হাজার ৯২ কিলোমিটার পথ চলতে সক্ষম। সুপার প্লাগ-ইন হাইব্রিড ইভি প্রযুক্তির গাড়িটি জ্বালানি সাশ্রয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
বিওয়াইডির বাংলাদেশের অফলাইন মার্কেটিং ও ক্যাটাগরি ডেভেলপমেন্ট প্রধান নাকিবুল ইসলাম খান বলেন, “গ্রাহকদের সাড়া অভাবনীয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২৫০টির বেশি ইউনিট বিক্রি হয়েছে। দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানো ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন নিশ্চিত করতে ইভি খাতকে জাতীয় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বিওয়াইডি সিল আই অটো ৩-এর মতো মডেল এবং চার্জিং স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে আমরা এই রূপান্তরের নেতৃত্ব দিচ্ছি।”
বড় হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি:
চীন শুধু বিনিয়োগই নয়, প্রযুক্তিগত সহায়তাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে চীনা কোম্পানিগুলো সরাসরি কাজ করছে। বিশেষ করে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক, স্মার্ট ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড প্রযুক্তিতে চীনের অবদান স্পষ্ট। সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ উদ্যোগের সঙ্গে চীনা প্রযুক্তির মেলবন্ধ নতুন বাজার ও সেবা খাতের জন্ম দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ই-কমার্স, মোবাইল পেমেন্ট, এআই-নির্ভর সাপ্লাই চেইন এবং ডিজিটাল কৃষি বাজার দ্রুত প্রসার করছে। চীনা প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে যুগান্তকারী রূপ দিচ্ছে।
চীনা বিনিয়োগে নতুন গতি:
২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে চীনা বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় এক হাজার চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে গার্মেন্টস, নির্মাণ, বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। চট্টগ্রাম ইপিজেডে চীনা মালিকানাধীন ডিরেকশন টেকনোলজি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে হেডফোন ও ডেটা ক্যাবল উৎপাদন কারখানা স্থাপন করছে। এতে ৪৭৮ জন স্থানীয় কর্মী নতুন চাকরিতে যুক্ত হবে। চায়না লেসো গ্রুপও প্রায় ৩২ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বিনিয়োগে নতুন কারখানা স্থাপন করছে। এখানে সৌর প্যানেল, পিভিসি পাইপ, স্যানিটারি সামগ্রী ও নির্মাণ উপকরণ উৎপাদিত হবে এবং ৫০০-৬০০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকার চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে প্রায় ৩০টির বেশি চীনা কোম্পানি কাজ করছে। সম্প্রতি বেজা চায়না লেসো গ্রুপের কাছে ১২ দশমিক ৫ একর জমি হস্তান্তর করেছে। চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ২০২৪ সালের শেষে প্রায় ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক্স, নির্মাণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা কোম্পানির উপস্থিতি দ্রুত বাড়ছে। বেজার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। চট্টগ্রাম ও মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় চীনা মালিকানাধীন বা যৌথভাবে পরিচালিত কারখানার সংখ্যা বাড়ছে।
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলেও চীনা বিনিয়োগে টেক্সটাইল, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স কারখানা গড়ে উঠেছে। তুলনামূলকভাবে কম শ্রমমূল্যের কারণে অনেক চীনা উদ্যোক্তা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন উৎপাদন হাব হিসেবে দেখছেন। চীনের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠছে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’, যা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বাড়াবে। চলতি বছরের মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস চীনে সরকারি সফর করেন। আলোচনায় ছিল বাণিজ্য ভারসাম্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও ঋণ পুনর্গঠন। চীন বাংলাদেশকে সবুজ জ্বালানি ও শিল্পাঞ্চল উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীন থেকে বাংলাদেশে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এতে রয়েছে মেশিনারি, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, তুলা, রাসায়নিক ও বিভিন্ন কাঁচামাল। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক কর্মকর্তা বলেন, “চীন বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি রপ্তানি গন্তব্য নয়, বরং প্রযুক্তি, উৎপাদন ও উদ্ভাবনের বিশাল উৎস।”
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, “বাংলাদেশ ও চীনের ৫০ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন আরও শক্ত ও কার্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নতুন সুযোগের দরজা খুলেছে। অবকাঠামো, তৈরি পোশাক, ওষুধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আইসিটি ও ইলেকট্রনিক্স খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়ছে। আমরা আশা করি এগুলো দেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাবেক মহাসচিব আল মামুন মৃধা বলেন, “বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের বিকাশে চীনের অবদান অনস্বীকার্য। শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের বেশিরভাগই আসে চীন থেকে। সুলভ মূল্যে উপকরণ সরবরাহের কারণে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি।”
সম্প্রতি বাংলাদেশের একদল ইউটিউবার, গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক চীনের গুয়াংজু প্রদেশ সফর করেন। অংশগ্রহণকারী ইউটিউবার সাঈদ সজীব বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমাদেরকে প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ ও সঠিক রিভিউ তৈরি করতে সাহায্য করবে। এখন কেবল পণ্যের বাহ্যিক দিক নয়, প্রযুক্তির কার্যকারিতা ও কৌশল সম্পর্কেও আমরা বিস্তারিত তথ্য দিতে সক্ষম হব।”
সৈয়দ মেহেদী হাসান, যিনি চীনের ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করেন, বলেন, “আমি পাঁচ বছর ধরে চীন থেকে মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ, স্মার্টওয়াচ, পাওয়ার ব্যাংক, স্পিকার ও ছোট হোম অ্যাপ্লায়েন্স আমদানি করছি। চীনের বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য বেশি এবং দাম তুলনামূলকভাবে কম। ফলে বাংলাদেশের ক্রেতাদের জন্য মানসম্মত পণ্য সুলভ দামে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমরা আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডও তৈরি করার পরিকল্পনা করছি।

