বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থ রিপ্যাট্রিয়েশন বা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া অধিকাংশ আবেদন প্রক্রিয়া করতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় কমিটি অনুমোদন সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ তথ্য গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ফিকি) এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক নূরুল কবীর বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অর্থ প্রত্যাবর্তন-সংক্রান্ত জটিলতা ছিল। জাতীয় কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সহজ করতে গিয়ে নতুন জটিলতা যেন তৈরি না হয়।”
বিডা জানিয়েছে, প্রত্যাবর্তন কাঠামোকে সহজ, গতিশীল ও আধুনিক করার লক্ষ্যে “রিপ্যাট্রিয়েশন অব সেল প্রসিডস ইন প্রাইভেট অ্যান্ড পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিজ” সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সুপারিশমালা চূড়ান্ত করেছে। কমিটিতে ছিলেন বিডা, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা। তারা অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে সুপারিশ প্রস্তুত করেছেন।
গত মঙ্গলবার বিডার নির্বাহী সদস্য ও জাতীয় কমিটির প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এই জাতীয় কমিটি ২৯ সেপ্টেম্বর গঠিত হয়েছিল। সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া অধিকাংশ ‘কেস’ বা আবেদন প্রক্রিয়া করতে পারে, এজন্য প্রত্যাবর্তন অনুমোদন সীমা বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রত্যাবর্তন-সংক্রান্ত সেবার জন্য সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) প্রবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে নথিপত্রের পরিমাণ কমিয়ে সমসাময়িক ও বৈশ্বিক মানদণ্ড যুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা হালনাগাদ করতে হবে। জটিল বা বিতর্কিত ‘কেস’ নিষ্পত্তি ও ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য পর্যালোচনা কমিটি গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। ১দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে এমন ব্যবসা ও স্টার্টআপের জন্য পৃথক নীতিমালা ও মূল্যায়ন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। এটি ২০২৬-এর প্রথম তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। মূল্যায়নকৃত কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স ও সনদ প্রদানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদে “ন্যাশনাল ভ্যালুয়েশন সার্টিফিকেশন অথরিটি” প্রতিষ্ঠার সুপারিশও করা হয়েছে। এছাড়া অথরাইজড ডিলার ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও জনবল বৃদ্ধি প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আধুনিক ও বিনিয়োগবান্ধব আর্থিক পরিবেশ গড়ার অঙ্গীকার সুপারিশমালায় প্রতিফলিত হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশকে নির্ভরযোগ্য ও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।”
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ। প্রস্তাবিত কাঠামো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করবে। এটি বাংলাদেশের প্রতি আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় জাতীয় কমিটি স্বল্প সময়ে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্যাকেজ উপস্থাপন করেছে।”

