জাপান ২০২৯ সাল পর্যন্ত সব স্বল্পোন্নত দেশকে (এলডিসি) অগ্রাধিকারমূলক শুল্কসুবিধা বা জিএসপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশও এই সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। তবুও জাপানের শুল্কসুবিধা বাংলাদেশের জন্য অন্তত তিন বছর বহাল থাকবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক কমিটি ৭ নভেম্বর নোটিশে জানিয়েছে, জাপান তিন বছরের জন্য এলডিসি ও এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়া দেশগুলোকে জিএসপি সুবিধা দেবে।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, তিন বছরের বাড়তি শুল্কসুবিধার সিদ্ধান্তটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যান্য দেশের জন্য প্রযোজ্য হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সঙ্গে সম্পর্কিত। জাপানের এই ঘোষণার ফলে এখন দেশটির সঙ্গে ইপিএ চুক্তি সই করতে বেশি সময় লাগবে না।
জাপানের শুল্কসুবিধার ঘোষণার পর কি বাংলাদেশ তাড়াহুড়া করে ইপিএ করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘মোটেও তাড়াহুড়া হচ্ছে না। চুক্তির আগে যথেষ্ট দর-কষাকষি হয়েছে। ইপিএর আলোচনাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে না নিয়ে গেলে জাপান তিন বছরের শুল্কসুবিধা দেওয়ার বিষয়ে রক্ষণশীল থাকত।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন বিশেষ সহকারী জাপানের সঙ্গে ইপিএ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে যদি ইপিএ চুক্তি হয়, তবে এটি হবে দ্রুততম সময়ে কোনো দেশের সঙ্গে ইপিএ করার উদাহরণ।
ডব্লিউটিওর নোটিশে বলা হয়েছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও দেশগুলোকে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা দিতে জাপান তার শুল্কব্যবস্থা সংস্কার করেছে। এলডিসি বা উত্তরণপ্রাপ্ত দেশগুলোকে উত্তরণ-পরবর্তী তিন বছরের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকারমূলক শুল্কসুবিধা দেওয়ার যোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশ বা অঞ্চল থেকে আমদানি করা নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর জাপানের শুল্ক হ্রাসের সুবিধা প্রযোজ্য হবে। এর মূল উদ্দেশ্য রপ্তানি আয় বাড়ানো, শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন উৎসাহিত করা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাপানে ১৪১ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর ৮৪ শতাংশই পোশাক। নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৬০ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এছাড়া হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা ইত্যাদিও রপ্তানি হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাপানের সঙ্গে ইপিএ এখন সময়ের ব্যাপার। আগামী এক–দুই মাসের মধ্যে ইপিএ স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। গত ২৬ জুন দুই দেশ খাতভিত্তিক আলোচনার পর ঢাকা ও টোকিওতে পণ্য ও সেবা ভিত্তিক আলোচনাও শেষ হয়েছে। ইপিএর প্রয়োজনীয় দর-কষাকষির চূড়ান্ত আলোচনা বাংলাদেশ শেষ করেছে টোকিওতে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তিন বছরের বাড়তি শুল্কসুবিধার সিদ্ধান্ত দিয়ে জাপান সুনামের অংশীদার হলো। তবে ইপিএ হলে জাপান অন্য কিছু চাইতে পারে। এখন জাপানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ হলো বাংলাদেশ। তাই তিন বছরের শুল্কসুবিধায় তারা বাংলাদেশের বিষয়টিও বিশেষভাবে বিবেচনা করেছে।’

