চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) শুরু থেকেই মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। জুলাই থেকে অক্টোবর—এই চার মাসে বরাদ্দের খুব অল্প অংশ খরচ হয়েছে। এ সময়ে ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের ব্যয় ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার চেয়ে কম।
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব সামান্য কমলেও সামগ্রিক ব্যয়ের গতি এখনো আগের অবস্থানে ফিরতে পারেনি। এডিপি ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবরে মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। যদিও আগের অর্থবছরে একই সময়ে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এর আগের তিন অর্থবছরে প্রথম চার মাসেই ব্যয়ের হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি—২০২৩-২৪ সালে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ২০২১-২২ সালে ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) এসব তথ্য প্রকাশ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
অক্টোবর মাস আলাদাভাবে হিসেব করলে দেখা যায়, ওই এক মাসে খরচ হয়েছে বরাদ্দের ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
জুলাই-অক্টোবরে ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৭৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা—যেখানে গত বছর চার মাসে ব্যয় হয়েছিল ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ছাড় কম থাকে। তবে এবার পরিস্থিতি ছিল আরও কঠিন। গত জুলাইয়ের সরকারবিরোধী আন্দোলন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, কারফিউ ও শাটডাউন—সব মিলিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম প্রায় থেমে গিয়েছিল।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় আগস্টে সরকার পতনের পর। আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে যান। নতুন সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নতুন করে যাচাই-বাছাই শুরু করলে পুরো অর্থবছরজুড়েই উন্নয়ন খাতে স্থবিরতা তৈরি হয়।
অর্থ সংকোচন ও রাজনৈতিক কারণে অনেক প্রকল্প বন্ধ বা স্থগিত থাকে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে এডিপি বাস্তবায়নে। দুই দশকের মধ্যে এমন কম বাস্তবায়ন হার আর দেখা যায়নি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে সংশোধিত এডিপির বরাদ্দের ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ খরচ হয়েছে—যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ পয়েন্ট কম। তার আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যয়ের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে এডিপির হিসাব পাওয়া যায়। বিদায়ী অর্থবছরের মতো এত কম ব্যয়ের হার আর কোনো বছরে নেই।

