ভারত ও চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক যেমন সবসময় মসৃণ নয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই শক্তিশালী ছিল। তবে চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করার পর ভারত-চীন বাণিজ্যে আরও গতি এসেছে।
পরিস্কারভাবে বলা যায়, চীনের বাজারে ভারতের পালে হাওয়া লেগেছে। মার্কিন বাজারে রপ্তানি কমলেও চীনের বাজারে তা বেড়েছে। বছরের প্রথমার্ধে সামগ্রিকভাবে ভারতের রপ্তানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভারত এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি করেছে। খবর: ইকোনমিক টাইমস ও ফরচুন ইন্ডিয়া।
ভারতের সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবর মাসসহ টানা সাত মাস চীনে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রতি মাসে ভারতের রপ্তানি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের কারণে রপ্তানিকারকরা কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। তবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তারা অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর মাসে চীনে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ৪২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে ২৪.৭ শতাংশ। এই সময় ভারত চীনে রপ্তানি করেছে মোট ১ হাজার ৩ কোটি ডলারের পণ্য। চীনের বাজারে রপ্তানি হওয়া পণ্যের শীর্ষে আছে পেট্রোলিয়াম পণ্য, টেলিকম যন্ত্রাংশ এবং মেরিন গুডস। ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, “গত কয়েক বছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এটা সবচেয়ে স্থিতিশীল পর্যায়। বৈশ্বিক চাহিদা অনিশ্চিত হলেও চীনে ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি ইতিবাচক সংকেত।”
পেট্রোলিয়াম পণ্যের রপ্তানি সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এপ্রিল মাসে ১১ শতাংশ, জুলাই মাসে ২৮ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। এই বৃদ্ধির ফলে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চীন ভারতের পণ্য রপ্তানির চতুর্থ বৃহত্তম গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। চীনের বাজারে রপ্তানি বাড়লেও মার্কিন বাজারে কমেছে। মূলত উচ্চ শুল্ক ও অনিশ্চয়তার কারণে পতন হয়েছে। অক্টোবর মাসে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে, তবে গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় তা এখনও কম। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের তথ্যমতে, মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানি ৩৭.৫ শতাংশ কমেছে। এটি এত অল্প সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের সর্বোচ্চ পতন।
প্রথম ছয় মাসে রপ্তানিতে রেকর্ড:
বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারত রপ্তানি করেছে ২০৯ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। দ্বিতীয় প্রান্তিকে রপ্তানি হয়েছে ২০৯.৯ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এটাই এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি।
সার্বিকভাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ভারতের রপ্তানি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রপ্তানি হয়েছে ৪১৮.৯ বিলিয়ন বা ৪১ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৮৬ শতাংশ বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লজিস্টিকস উন্নয়ন, বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি সহজীকরণ ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে এই সফলতা এসেছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, আধুনিক সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করা এবং স্মার্টফোন রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ভূমিকা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার নীতিসংস্কার, বাণিজ্য চুক্তি ও লজিস্টিকস উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের সমর্থন দিচ্ছে। সাম্প্রতিক অর্জন ভবিষ্যতেও ভারতের পালে আরও হাওয়া দেবে।

