গত (২২ নভেম্বর) থেকে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানের পণ্য পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বা ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৫ টনের একটি চালান বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে এবং ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানে যাবে। এই ট্রায়াল আজ ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের বাংলাদেশ সফরের মধ্যেই এই ট্রানজিট কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ট্রায়াল রান সফলভাবে সম্পন্ন হলে দক্ষিণ এশিয়ার এই স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটান নিয়মিতভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ৬৮৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবে।
সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে আজ ঢাকা ত্যাগ করেছেন এবং সফরকালীন সময় ভিভিআইপি প্রটোকল পেয়েছেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ভুটানি পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) লিখিত সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এই সফরের সময় দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহের গত শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের আয়োজন করা নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আগামী জানুয়ারিতে ভুটানের সঙ্গে পরবর্তী বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২২ মার্চ বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। ২০২২ সালের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছিল যে, দুটি ট্রায়াল রান সম্পন্ন হলে চুক্তি কার্যকর হবে।
গত অক্টোবরে ভুটান বাংলাদেশকে একটি ‘নোট ভার্বাল’-এর মাধ্যমে জানায় যে প্রথম ট্রায়াল রানের জন্য ১৫ টনের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে লোড করা হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত পণ্য খালাস ও পরিবহনের দায়িত্ব মেসার্স অভি কার্গো কোম্পানির ওপর দেওয়া হয়েছে।
আগের অভিজ্ঞতায়, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ চারটি ট্রায়াল রান সম্পন্ন করেছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারত কর্তৃক নির্ধারিত ট্রানজিট ফি ও চার্জ আগে আন্তঃসরকারি কমিটির মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছিল। ভুটান চুক্তির অধীনে একটি যৌথ কারিগরি কমিটি চার্জ ও ফি নির্ধারণ করবে। তবে কমিটি গঠনের আগেই এবং চার্জ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ভুটান ট্রায়াল রানের অনুরোধ জানায়। যেহেতু চালান ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে, তাই বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে এই ট্রায়াল রান অনুমোদন করেছে।
ভুটানের ট্রায়াল ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশ ফি ও চার্জের তালিকা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি প্রতি চালানে ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি টন ২০ টাকা, নিরাপত্তা চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা, এসকর্ট ফি প্রতি কন্টেইনারে কিলোমিটার প্রতি ৮৫ টাকা, প্রশাসনিক চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা এবং স্ক্যানিং ফি প্রতি কন্টেইনারে ২৫৪ টাকা। এছাড়া সড়ক টোল ও করিডোর ব্যবহারের ফি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে।

