দেশের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিরূপণে গত বছরের ডিসেম্বরে একটি শুমারি কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি।
পরবর্তীতে বিবিএসের এই গণনা যাচাই (পিইসি) করেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। যাচাই প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রাথমিক গণনায় ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছিল, যা সংখ্যায় তিন লাখ ৬৫ হাজার। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক কোটি ২২ লাখ ৪২ হাজার ৮৩৬।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে এই যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আকতার। বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক। পিইসি প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
বিআইডিএসের পিইসি কার্যক্রমে ৩৫২টি নমুনা এলাকা থেকে ২৮ জুন থেকে ১০ জুলাই সময়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে বিবিএসের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৯ জানুয়ারি। শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সারাদেশে ৮৭ হাজার ৬২৯টি গণনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিবিএস। চূড়ান্ত অর্থনৈতিক শুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে আগামী মাসে।
পিইসি পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়া গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারিতে পাওয়া ত্রুটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। সাধারণত ৫ শতাংশ পর্যন্ত পার্থক্য গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। এখানে ত্রুটি মাত্র ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তিনি বলেন, তিন লাখ ৬৫ হাজার প্রতিষ্ঠান শুমারিতে বাদ পড়ার কারণ হলো অস্থায়ী, মৌসুমি ও ভাসমান অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা একবার একেক জায়গায় থাকে। কখনও কম গণনা হয়, কখনও দুইবার। এছাড়া তৈরি পোশাক কারখানাগুলো গণনাকর্মীদের প্রবেশ বাধা দেয়ায় সেগুলোও শুমারি থেকে বাদ পড়ে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার বলেন, বিবিএস ও বিআইডিএসের গণনার মধ্যে পার্থক্যের বড় কারণ ছিল রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। আগস্টে সরকার পরিবর্তন ও প্রশাসনে অনেক রদবদলের মধ্যে অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। অনেকে তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র হিসাব নিলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আকতার বলেন, যে কোনো জরিপ বা শুমারিতে তথ্য সংগ্রহই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গণনাকর্মীদের অবহেলা এ ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ। পোশাক কারখানাসহ কিছু স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে গণনাকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আইনে সব নাগরিক বিবিএসের তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতার বাধ্যবাধকতা আছে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, বৈরী পরিস্থিতিতে গণনা কাজ হয়েছে। কিছু ত্রুটি থাকতে পারে, তবে তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রার মধ্যে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাদ পড়ার হার সব অঞ্চলে সমান ছিল না। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাদ পড়া বেশি। কারণ এসব এলাকায় ব্যবসা দ্রুত স্থানান্তরিত হয়, নতুন উদ্যোগ শুরু হয় এবং অস্থায়ী বা অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান বেশি থাকে। ক্ষুদ্র সেবা ভিত্তিক ব্যবসা, অস্থায়ী স্টল, ফুটপাতের দোকান ও অনানুষ্ঠানিক খাতের ইউনিট বেশি হারে বাদ পড়েছে।

