ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে প্রায় চার বছর ধরে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া দেশটিতে সর্বাত্মক হামলা চালায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ব্যাংক খাত কিন্তু এতটা নাজুক হয়নি, যতটা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে।
ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৬ শতাংশ। তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গবেষণা সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার এখন সর্বোচ্চ। কোনো দেশের খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশের বেশি হয়নি। যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দায় থাকা দেশগুলোর খেলাপি ঋণও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। উদাহরণ হিসেবে তিউনিসিয়ার ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ১৪.৭ শতাংশ। ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত লেবাননের খারাপ ঋণ ২৪ শতাংশের নিচে। ইউক্রেনের সঙ্গে প্রায় চার বছর যুদ্ধ চালানো রাশিয়ায় খেলাপি ঋণের হার মাত্র ৫.৫১ শতাংশ। যদিও ঐতিহাসিকভাবে অলিগার্ক প্রভাবিত রাশিয়ায় ঋণ খেলাপি হওয়ার হার সর্বদা তুলনামূলকভাবে বেশি।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের এই চরম চাপ উদ্বেগজনক। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর নীতি না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। বিনিময় হারে চরম অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটে থাকা এশিয়া, ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর খেলাপি ঋণের হার এখন কমছে। তুরস্কের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ২.২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এক দশক আগে দেউলিয়া হয়েছিল গ্রিস, তার ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার এখন মাত্র ৩.৬ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও স্থানীয় মুদ্রার রেকর্ড পতনের মুখে থাকা আর্জেন্টিনার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১.৬ শতাংশে নেমেছে। চলতি সহস্রাব্দের শুরুতে সেখানে খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের বেশি ছিল।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এ অঞ্চলে কেবল শ্রীলঙ্কার হার কিছুটা বেশি—১২.৬ শতাংশ। তিন বছর আগে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা দ্বীপরাষ্ট্রটি এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ভুগছে পাকিস্তান। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং পদক্ষেপের কারণে গত দুই বছরে খেলাপি ঋণও কমেছে। বর্তমানে পাকিস্তানের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ৭.৪ শতাংশ। প্রতিবেশী ভারতের ক্ষেত্রে এ হার ২.৩ শতাংশ, আর নেপালের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার সীমিত রেখে ৪.৪ শতাংশে রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের এই চরম চাপ বিশ্বমানের তুলনায় উদ্বেগজনক। দ্রুত নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। সিঙ্গাপুরে খেলাপি ঋণের হার ১.৩ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১.৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ২.৭ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৩.৩ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৫.৪ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ২.১ শতাংশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির চীনের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ মাত্র ১.৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এ হার ১.৭ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.৭৩ শতাংশ। তুলনায় গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২০.২ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। গত এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের এই বৃদ্ধি নজিরবিহীন। বর্তমানে যে হার দাঁড়িয়েছে, এটি গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। তবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরের মাসে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়। গত দেড় দশকে আওয়ামী শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য লাখ লাখ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা হয়েছে। দুই বছর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এক গবেষণায় জানিয়েছিল, তখন দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি ‘দুদর্শাগ্রস্ত’।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী সরকারের আমলে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ খেলাপি হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ গণনার নীতি পরিবর্তন, সুদহার বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবও খেলাপি ঋণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা চালানো হয়। এতে খেলাপি ঋণের করুণ চিত্র সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঋণের মেয়াদ গণনা করছে। আগে এক বছর কিস্তি পরিশোধ না করলেও অনেক ঋণ খেলাপি ধরা হতো না। এখন তিন মাস বা ৯০ দিন অনাদায়ী থাকলেই ঋণ শ্রেণীকৃত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুনঃতফসিল ও নীতিসহায়তার মাধ্যমে আগামীতে খেলাপি ঋণ কমানো হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘অতীতে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ “কার্পেটের নিচে” চাপা রাখত। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রভাবশালীদের দেওয়া ঋণ খেলাপি দেখানো হতো না। কিন্তু গত এক বছরে এসব ঋণ বের হয়ে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র জানা। আশা করি, এবার খেলাপি ঋণ কমতে শুরু করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৩৬ শতাংশ হলেও এশিয়ার দেশগুলোর গড় হার মাত্র ১.৬ শতাংশ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) চলতি বছর প্রকাশিত ‘ননপারফর্মিং লোনস ওয়াচ ইন এশিয়া-২০২৫’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১.৪ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গড় হার ৩.৫ শতাংশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর হার ২.৬ শতাংশ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর হার ২.৭ শতাংশ। এ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০.২ শতাংশ। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের এই বিশাল খেলাপি ঋণ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় উদ্বেগজনক।
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক এই হার অপ্রত্যাশিত নয় বলে জানিয়েছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণের হার ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ ছয় মাস আগে গভর্নর স্যার বলেছিলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের বর্তমান পরিমাণ ও হার গত দেড় দশকে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ফল। এতদিন কিছু ব্যাংক খেলাপি ঋণের তথ্য ঢেকে রাখার সুযোগ পেয়েছিল। এখন ঢেকে রাখা তথ্য প্রকাশ করতে হচ্ছে।’
তবে তিনি মনে করেন, আগামীতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার হয়েছে। এখন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়ে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিসহায়তার মাধ্যমে এগিয়ে আসছে। আশা করছি, ডিসেম্বর নাগাদ ঋণ কমে আসবে। এছাড়া অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ইতিহাসের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ত্রৈমাসিকে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আগে সর্বশেষ মার্চ প্রান্তিকের তথ্য প্রকাশ হয়েছিল। তখন দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা খেলাপির খাতায় ছিল। গতকাল প্রকাশিত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি বেড়ে ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকাই খেলাপির তালিকায় উঠেছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.৭৩ শতাংশ এখন খেলাপি।
বাংলাদেশের ব্যাংক আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থ থেকে ঋণ বিতরণ করে। ব্যাংকগুলোকে প্রতিটি ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে প্রভিশন বা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। কোনো ঋণ খেলাপি হলে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে সেই ঋণের সমপরিমাণ টাকা সঞ্চিতি হিসেবে তুলে রাখতে হয়। সঞ্চিতি ঘাটতি মানে আমানতকারীদের টাকা ঝুঁকির মধ্যে এবং ব্যাংকের মূলধনও চাপের মুখে পড়েছে।
খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণও বিপুল বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো সেই সময় মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার সঞ্চিতি রাখতে পেরেছে। ফলে সেপ্টেম্বর শেষে সঞ্চিতি ঘাটতি ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। গত মার্চে সঞ্চিতি ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসে সঞ্চিতি ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো এ পরিমাণ খেলাপি ঋণের বিপরীতে কোনো নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে পারেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই যুগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ হার ছিল ১৯৯৯ সালে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম শাসনামলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্বল নজরদারি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সে সময়ে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪১.১০ শতাংশ খেলাপির তালিকায় উঠে। পরবর্তী বছরে খেলাপি ঋণের হার কমতে থাকে। ২০০০ সালে হার নেমে আসে ৩৪.৯০ শতাংশে।
২০০১ সাল থেকে পরবর্তী নয় বছরে খেলাপি ঋণের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০১০ সালে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৭.২৭ শতাংশ, স্থিতি ছিল মাত্র ২২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। কিন্তু এরপর ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট শুরু হয়। বেসিক ব্যাংক লুণ্ঠন থেকে শুরু করে পুরো ব্যাংক খাত সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাবে ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের স্থিতি ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকায় পৌঁছায়। গত বছরের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ২০.২ শতাংশে।
গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ড. আহসান এইচ মনসুর দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্তত ১৪টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংকে রূপান্তরের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামীতে আরও কয়েকটি ব্যাংক একীভূত বা অবসায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে।
তবে অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপকে যথেষ্ট মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। মানুষের সমর্থনও ছিল নজিরবিহীন। সরকার চাইলে আরও কঠোর সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারত। কিন্তু সেটি হয়নি। কিছু ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারত। আমরা এখনো সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। যেসব সংস্কার নেওয়া হয়েছে, সেগুলো শেষ করাও কঠিন। তবে আমরা এখনো আশাবাদী থাকতে চাই। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আগামী দুই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু করে দেখাক।’

