দেশের অর্থনীতিতে এখন রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিন্তু ব্যবসায়ীদের চিৎকার সরকার শুনছে না বলে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তাঁর অভিযোগ, সরকার বাণিজ্য-বাণিজ্যিক খাতের সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না এবং ব্যবসায়ী মহলের উদ্বেগকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে আয়োজিত পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান।
অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পারভেজ বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করেও সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ২০২২ সালের পর থেকে জ্বালানি সংকটে শিল্পউৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, ক্ষুদ্র খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁর দাবি, প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র শিল্প ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে এবং এসব খাতের বহু উদ্যোক্তা জীবিকার জন্য ঢাকায় এসে ইজিবাইক বা ‘টেসলা’ চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে রাজধানীর জনসংখ্যাও বেড়ে সাড়ে তিন কোটির ঘরে পৌঁছেছে।
খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গ টেনে বিসিআই সভাপতি বলেন, একসময় খেলাপি ঋণের হার ১৭ শতাংশ থাকতে আইএমএফ বাংলাদেশকে মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ বলেছিল। এখন এই হার ৩৫ শতাংশের বেশি হওয়ায় তিনি প্রশ্ন তোলেন—আইএমএফ এখন এ অবস্থাকে কোন ঝুঁকি–পর্যায়ে দেখবে। তাঁর মতে, ঋণের ব্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে জাইদী সাত্তার বলেন, প্রবৃদ্ধির গতি কমলেও অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার লক্ষণ আছে তবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে নিয়ম–নীতি আরও উদার করা প্রয়োজন। তাঁর ধারণা, পাল্টা শুল্কের প্রভাবে রপ্তানি কমলেও বাংলাদেশ এখনো এই খাতে ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় ভালো অবস্থানে।
মূল প্রবন্ধে অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণের উচ্চহার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে দেশের অর্থনীতিতে মধ্যমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি হবে এবং এর প্রভাব বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাকেও সংকুচিত করবে। তিনি এটিকে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক পর্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন এবং খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মত দেন।

