গার্মেন্টসপল্লি খ্যাত ঢাকার কেরানীগঞ্জে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে ওঠা পল্লিতে ছোট-বড় ১০ হাজারের বেশি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এছাড়া আশপাশের আগানগর, জিনজিরা, শুভাঢ্যা, কালিন্দী, কোন্ডা ও শাক্তা ইউনিয়নে বসবাস করছে আরও বিপুলসংখ্যক মানুষ। সব মিলিয়ে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ অঞ্চলে রাস্তার অবকাঠামো অপর্যাপ্ত, নেই বড় মাঠ বা খোলা জায়গা। ফলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে তীব্র বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। বুড়িগঙ্গার পাড়ঘেঁষা আগানগর, জিনজিরা ও শুভাঢ্যা এলাকায় গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ তৈরি পোশাক শিল্পাঞ্চল। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পোশাক এখান থেকেই সরবরাহ করা হয়। পল্লিতে কিছু পরিকল্পিত মার্কেট ও ভবন থাকলেও অধিকাংশ কারখানা পুরোনো বসতবাড়ি, ছোট কামরা ও সরু গলির মধ্যে গড়ে উঠেছে। বেশিরভাগ ভবনের সঠিক অনুমোদন নেই, বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। চারপাশে খোলা জায়গা নেই, আলো-বাতাসের ব্যবস্থা অপ্রতুল। আগুন বা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে দ্রুত বের হওয়ার পথও নেই।
জেলা পরিষদ মার্কেটের দোতলায় একটি প্যান্ট কারখানায় সাত বছর ধরে কাজ করা ইমরান হোসেন বলেন, ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে মার্কেট ভবন অস্বাভাবিকভাবে কেঁপে ওঠে। মানুষ দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে, কয়েকজন আহতও হন। বন্ধের দিন হওয়ায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। তিনি জানান, কয়েকটি পিলারের নিচে মাটি ফাঁপা, ভূমিকম্প আরও কিছুক্ষণ স্থায়ী হলে বড় বিপর্যয় হতো।
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও সোহেল রানা বলেন, ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে কেরানীগঞ্জে ভয়াবহ ক্ষতি হবে। সরু রাস্তা, ঘনবসতি ও অপরিকল্পিত ভবনের কারণে উদ্ধারকাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। বড় দুর্ঘটনার আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তারা।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, নূর মার্কেট, তানাকা সুপার মার্কেট, হেলাল টাওয়ার, গ্রিন টাওয়ারসহ একাধিক ভবনে আগুন লেগেছে। সম্প্রতি ভূমিকম্পে জিনজিরার একটি সাততলা ভবন হেলে পড়েছে, আগেও কয়েকটি বিল্ডিং ধসে গেছে। শুভাঢ্যা, আগানগর ও জিনজিরায় ভবন নির্মাণের অবস্থা এমন যে, কোনো বড় দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তেমন কিছু করার সুযোগ থাকবে না।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, এই শিল্পাঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তামূলক অবকাঠামো ও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন, খোলা জায়গা নিশ্চিতকরণ, প্রশস্ত সড়ক ও জরুরি উদ্ধার ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না হলে ২০ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন, তিনটি ঘনবসতি ইউনিয়নে ১০ হাজার কারখানার শ্রমিক এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছেন। গার্মেন্টসপল্লিসহ বিভিন্ন এলাকায় ভবনগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তবে নতুন মার্কেট ও ভবন আধুনিক নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে কেরানীগঞ্জ নিরাপদ ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে।

