রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজির সরবরাহ ধীরে ধীরে বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু দাম এখনো গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম এখনো ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর একই সময় তা ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, আলু, মুলা ও শালগমসহ বেশিরভাগ সবজির ক্ষেত্রেই।
নতুন উঠা আলুর দামও আশানুরূপ কমেনি। মানভেদে প্রতি কেজি নতুন আলু ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, আর পুরনো আলু কেজিতে বাড়তি ৫ টাকা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, মুরগি ও ডিমের বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই।
শুক্রবার কাওরান বাজার, ফকিরাপুল, কাপ্তান বাজার, মুগদা বাজার ও খিলগাঁও সিটি করপোরেশন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সবজি কেন এত দামি? বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা
বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে ঠিকই, তবে উৎপাদন এলাকাতেই সবজির দাম বেশি। আগাম শীতের সবজি চাষে কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন—ফলে পাইকারিতে দাম কমছে না।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গত অক্টোবরের বৃষ্টি। তখন অনেক সবজি নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা এখন বাড়তি দামে বিক্রি করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। এসব কারণেই ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি।
প্রতিবছর শীতের শুরুর দিকে ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০–৪০ টাকা, শিম ৪০–৬০ টাকা, আর মুলা ২৫–৩০ টাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু এবার শিম ১০০–১২০, টমেটো ১২০–১৪০, কাঁচা মরিচ–বরবটি–করলা ১০০–১২০, ঢ্যাঁড়স ৬০–৮০, পটোল ৫০–৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
পেঁয়াজের বাজার স্থির, তবে দামে স্বস্তি নেই
বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০–১২০ টাকার মধ্যেই ঘুরছে। এক মাস ধরে একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারকেরা আমদানি অনুমতি চাইলেও সরকার কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় তাতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টা।
মাছ–মাংসেও স্বস্তি নেই
দেশি মাছের সরবরাহ থাকলেও দাম কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। শীতের সময়ে বোয়াল, আইর, শোলের চাহিদা বেশি থাকলেও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
ইলিশের দাম আবারও উর্ধ্বমুখী—৩০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১০০০ টাকা, অর্ধকেজি ১৬০০, ৭০০ গ্রাম ১৮০০–২০০০ এবং এক কেজি ইলিশ ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য মাছের বাজারেও চড়া দাম:
রুই ৪০০–৫৫০, দেশি শিং ১০০০–১২০০, মাগুর ৮০০–১০০০, চাষের পাঙ্গাশ ২০০–২৩০, চিংড়ি ৮০০–১৪০০, বড় কাতল ৪০০–৫৫০ টাকা।
মুরগি, ডিম ও মাংসের পরিস্থিতি
ব্রয়লার মুরগি ১৭০–১৮০, সোনালি ২৮০–৩০০ এবং ফার্মের ডিম ডজনপ্রতি ১২০–১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস ৭৫০–৭৮০, খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি দরে অপরিবর্তিত আছে।
চাল–ডাল–মশলার দামও চাপে
দেশি আদা ১৪০–১৬০, চায়না আদা ২০০, দেশি রসুন ১০০ এবং ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসুর ১৬০, মুগ ১৮০, ছোলা ১১০ এবং খেসারি ১৪০ টাকা কেজি।
লাল ডিম ডজনপ্রতি ১৩০, হাঁসের ডিম ২১০, দেশি মুরগির ডিমের হালি ১১০ এবং সোনালি কক মুরগির ডিমের হালি ৭০ টাকা।
চালের বাজারেও বড় কোনো স্বস্তি নেই—মিনিকেট ৮৫–৯২, নাজিরশাইল ৮৪–৯০, স্বর্ণা ৫৫ এবং ২৮ নম্বর চাল ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

