ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে তার কর্মকর্তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ‘লোন ডিফল্টার’ হিসেবে তালিকাভুক্ত না করা হয়। বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন আইসিবির কর্মকর্তারা কোনো ঋণপরিশোধে ব্যর্থ কোম্পানির পরিচালকের পদে মনোনীত হন।
সাম্প্রতিক সময়ে আইসিবি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ডিভিশন (এফআইডি)-কে এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৬ সালে গঠিত হয় দেশের দ্রুত শিল্পায়ন এবং টেকসই পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭৭ সালে আইসিবি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আইসিবি দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এটি কোম্পানিগুলোকে মূলধনের সংকট দূর করতে সহায়তা করেছে, মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিনিয়োগকে এগিয়ে এনেছে। আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ অ্যাক্টের ধারা ১৭ অনুযায়ী, আইসিবির কর্মকর্তারা ম্যানেজিং ডিরেক্টরসহ নির্দিষ্ট কোম্পানির বোর্ডে পরিচালকের পদে মনোনীত হন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আইসিবির স্বার্থ রক্ষা করা এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আইসিবি জানিয়েছে, এই পদে থাকায় প্রতিষ্ঠানটি নিজের পাশাপাশি ছোট বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও সুরক্ষিত রাখতে পারে। তবে, সমস্যাটি দেখা দেয়, যখন কোনো আইসিবি-নোমিনেটেড পরিচালক সিআইবি-তে লোন ডিফল্টার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। চিঠিতে আইসিবি উল্লেখ করেছে, এমন পরিস্থিতিতে কর্মকর্তারা পরিচালকের পদে মনোনীত হওয়া থেকে বিরত থাকতে শুরু করেন। কারণ ব্যক্তিগত সিআইবি স্ট্যাটাস নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।
বিশেষ করে, যদি কোনো মনোনীত কোম্পানির খারাপ ঋণের কারণে আইসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ডিফল্টার হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে প্রতিষ্ঠানটিকেও স্বাভাবিকভাবেই ডিফল্টার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এটি আইসিবির কার্যক্রম ও কর্মকর্তা নিয়োগে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
আইসিবি আরও স্পষ্ট করেছে, তার মনোনীত পরিচালকরা শুধুমাত্র বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ইনভেস্টি কোম্পানির নেওয়া ঋণের জন্য কোনো ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দেন না। আইসিবি জানিয়েছে, কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ১৯৯৪, করপোরেট গভর্নেন্স কোড, ২০১৮ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান সার্কুলারগুলিতে বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি বা মনোনীত পরিচালককে সিআইবিতে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ১৮ অক্টোবর ২০২৩ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির ঋণ বা দায়ের কারণে স্বাধীন পরিচালকদের সিআইবি তালিকাভুক্ত করা হবে না। একইভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২ জানুয়ারি ২০২৫ সালের সার্কুলারেও বলা হয়েছে, আর্থিক কোম্পানির স্বাধীন পরিচালকরা তাদের কোম্পানি ডিফল্টার হলেও ঋণ ডিফল্টার হিসেবে গণ্য হবেন না। (এটি ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি অ্যাক্ট, ২০২৩-এর ধারা ১৬(৫)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ) আইসিবি বলেছে, যেহেতু এটি একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান যা নিজের পাশাপাশি ছোট বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে, তাই তার মনোনীত পরিচালকদের স্বাধীন পরিচালক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
আইসিবির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ডিভিশনকে অনুরোধ করেছি, যাতে আইসিবি এবং এর মনোনীত পরিচালকরা সিআইবিতে ডিফল্টার হিসেবে তালিকাভুক্ত না হন।” অপর দিকে, এফআইডির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “রাষ্ট্রায়ত্ত আইসিবি আমাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে মনোনীত পরিচালকদের নাম সিআইবি-র ডিফল্টার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।”

