প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবস উদযাপন করে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এবার ওই তারিখে আয়কর দিবস উদযাপন হচ্ছে না। অফিসিয়ালভাবে এই দিবস বাতিল বা পরিবর্তনের ঘোষণা পাওয়া যায়নি।
গত বছর এনবিআর জানিয়েছিল ভিন্ন কোনো দিনকে জাতীয় আয়কর দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা আছে। তবে এখনও নতুন কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তাই ২০২৪ সালে আয়কর দিবস নিয়ে কর অফিস এবং সাধারণ মানুষ নিরব অবস্থায় রয়েছেন। এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল-আমিন শেখ বলেন, “আজকের আয়কর দিবস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আমার কাছে নেই। অফিসিয়ালভাবে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর কর্মকর্তা জানালেন, “৩০ নভেম্বর এতদিন আয়কর দিবস হিসেবে উদযাপিত হলেও এবার তা পালন হচ্ছে না। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে অনেক জাতীয় দিবস পরিবর্তন হয়েছে। এ দিবসেরও পরিবর্তন করার পরিকল্পনা ছিল। প্রতিবছর আয়কর মেলা হতো, সেরা করদাতাদের পুরস্কারও দেওয়া হতো। তবে এবার সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, নতুন সিদ্ধান্ত কমিটি নেবে। আপাতত বিষয়টি পরিষ্কার নয়।”
২০১৬ সাল থেকে ৩০ নভেম্বরকে আয়কর দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর এই দিবস পালিত হতো। অর্থাৎ গত ১৬ বছর ধরে রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন জাতীয় আয়কর দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রথম আয়কর দিবস পালন করা হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধি করার পর ৩০ নভেম্বরকে আয়কর দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দিন ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। তবে চলতি বছর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বৃদ্ধি করে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
আয়কর নির্দেশিকা অনুযায়ী ৪৫ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক। তাই ই-টিআইএনধারীদের বিকল্প নেই। দেশে বর্তমানে ১ কোটি ২৫ লাখের বেশি কর শনাক্তকারী নম্বরধারী (টিআইন) করদাতা রয়েছেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
এনবিআরের বিশেষ আদেশে ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব প্রবীণ, শারীরিকভাবে অসমর্থ, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার আইনগত প্রতিনিধি এবং দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সকল ব্যক্তিগত করদাতার জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে চাইলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত করদাতারাও অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
ই-রিটার্ন সিস্টেমে কোনো দলিল বা কাগজপত্র আপলোড ছাড়াই আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের তথ্য ঘরে বসে এন্ট্রি করে রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব। ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে কর পরিশোধ করে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ ও আয়কর সনদ প্রিন্ট করা যায়।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় বছরে চার লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আয় পাঁচ লাখ টাকার বেশি হলে, প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হলে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এ ছাড়াও নানা কারণে করদাতাদের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে না, বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখানোও আবশ্যক।

