রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকৃত লোকসান দেখাতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগের বর্তমান বাজারমূল্য না দেখিয়ে কেবল ক্রয়মূল্যে হিসাব করছে। এ কারণে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
এই বছরের নিরীক্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবিকে বিনিয়োগের ব্যয়মূল্যে প্রতিবেদন করার জন্য ‘নো অবজেকশন’ দিয়েছে। নিরীক্ষকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত আইসিবির শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্রয়মূল্য ছিল ১৪ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। অথচ বিনিয়োগগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য মাত্র ৯ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এর ফলে, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ থেকে ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার ক্ষতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রতিবেদনে গোপন রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে শিথিলতা দেখিয়েছে, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আংশিক প্রভিশনের অনুমতি দিয়েছে। কোম্পানি এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারের বিনিয়োগের বিপরীতে ১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা প্রভিশন করেছে। ফলে, শুধু এই বিভাগের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এরপরও, আইসিবি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি দেখিয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়ের কারণে তারা পূর্ণ প্রভিশন করতে বাধ্য নয়।
আইসিবি কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, শেয়ারবাজারে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন ঘটলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। তারা বলেন, “বাজারের সহায়ক ভূমিকা ছাড়া পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব নয়।” সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে সূচকের সামান্য বৃদ্ধির ফলে গোপন রাখা লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
আইসিবি হিসাব করে দেখেছে, শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক প্রতি এক পয়েন্ট বাড়লে প্রভিশন চাহিদা প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা কমে যায়। তাই যদি সূচক ১০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়, প্রভিশন চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা কমবে। কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারবাজারের বিনিয়োগের গোপন রাখা লোকসানের বিপরীতে কোনো প্রভিশন রাখা হয়নি।

