অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে মনে করছে দেশটির জাপানি বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে জরিপ পরিচালনা করে জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ইন ঢাকা (জেসিআইএডি)।
জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৮২। জেসিআইডি জানায়, এটি নির্দেশ করে যে গত এক বছরে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি খুবই সামান্য বা প্রায় নেই। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো ধরনের সংস্কার হয়নি। বিডা কার্যালয়ে সম্প্রতি জেসিআইডির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নয়নে ইতোমধ্যেই কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও সবকিছু এখনো দৃশ্যমান নয়, ধীরে ধীরে উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
জেসিআইডির জরিপে অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিডার সদস্য নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, ভিসা পদ্ধতি সহজীকরণসহ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তবে জাপানি কোম্পানিগুলো এসব বিষয়ে পর্যাপ্তভাবে অবহিত না হওয়ায় জরিপে তা প্রতিফলিত হয়নি।
বৈঠকে রোচি আরও জানান, জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। তারা এতে সন্তুষ্ট হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে নতুন করে একটি জরিপ পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ৩০ থেকে ৩২টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে সব সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি।
জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো ঢাকা) এবং জেসিআইডির মহাসচিব কাজুইকি কাতাওকা জানান, জরিপের ফলাফলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের মান গড়পড়তা হিসেবে উঠে এসেছে। বিডার সঙ্গে বৈঠকে যে অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা জানলে স্কোর কিছুটা উন্নত হতো।
কাতাওকা চার অঙ্কের এইচএস কোড ব্যবহার করে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সহজীকরণ এবং অক্টোবর মাসে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটের অনলাইনভিত্তিক নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতিকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তিনি বলেন, নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে প্রায়ই সামঞ্জস্যতা না থাকার কারণে লো রেটিং এসেছে। তবুও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
জেসিআইডির জরিপে বাংলাদেশের ১৫৩টি জাপানি কোম্পানির মধ্যে ৪৫টি অংশ নেয়। এদের মধ্যে অ্যাপারেল, টেক্সটাইল, লেদার, নির্মাণ, সেবা, জ্বালানি, আইটি, ট্রেডিং ও লজিস্টিক খাতের প্রতিষ্ঠান ছিল। জরিপে সাতটি মূল বিষয় মূল্যায়ন করা হয়েছে—কর পদ্ধতির সরলীকরণ, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজীকরণ (কাস্টমস ও নিবন্ধন), বিদেশিদের জন্য ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট পদ্ধতি সহজীকরণ, আর্থিক বাজার অবাধকরণ, নীতি কাঠামোয় ধারাবাহিকতা, দুর্নীতি দমন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় সংস্কার ও সেবা সুবিধা।
এই সাতটি ইস্যুর ভিত্তিতে কোনো উন্নতি না থাকলে স্কোর ১, সামান্য উন্নতির জন্য ২ এবং যথেষ্ট উন্নতির জন্য ৫ ধরা হয়েছে। জেসিআইডি জানায়, অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলো বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশে কোনো প্রকৃত উন্নতি হয়নি। স্কোর দাঁড়িয়েছে ১.৮২।
জরিপে দেখা যায়, খুব কম সংখ্যক কোম্পানি ইতিবাচক মত দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক মত এসেছে কর ব্যবস্থা সহজীকরণের ক্ষেত্রে, যেখানে ৩২টি কোম্পানি নেতিবাচক মত দিয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং দুর্নীতি দমনে ২৮টি কোম্পানি নেতিবাচক মত প্রকাশ করেছে। নীতির ধারাবাহিকতায় কোনো ইতিবাচক মত পাওয়া যায়নি, ১৮টি কোম্পানি নেতিবাচক মত দিয়েছে। ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বিষয়ে মাত্র পাঁচটি কোম্পানি ইতিবাচক মত দিয়েছে, ২৬টি কোম্পানি জানিয়েছে কোনো উন্নতি হয়নি।

