সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা মারা গেলে টাকা কে পাবেন—এ প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে। বিশেষ করে মৃত্যুর পর বিনিয়োগের অর্থ ও মুনাফার সঠিক মালিকানা নিয়ে অনেকের মনে বিভ্রান্তি থাকে।
নিয়ম পরিষ্কার—ক্রেতা মারা গেলে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি বা নমিনি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা পুরো টাকা পাবেন। প্রতি মাসে যে মুনাফা আসে তাও তুলতে পারবেন নমিনি।
কীভাবে নমিনি টাকা তুলবেন:
নতুন পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র কেনা থাকলে নমিনিকে প্রথমে ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। শুধু আবেদন করলেই হবে না, সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১. ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ক্রেতার মৃত্যুসনদ
২. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেট
৩. নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
৪. নমিনির দুই কপি ছবি
৫. নমিনির নাগরিকত্ব সনদের কপি
৬. নমিনির স্বাক্ষর সত্যায়ন
৭. নমিনির ব্যাংক হিসাবের এমআইসিআর চেক পাতার কপি
মৃত্যুর পর সঞ্চয়পত্র চালু রাখা যাবে?
হ্যাঁ, চাইলে নমিনি পুরো টাকা তুলে নিতে পারেন, আবার চাইলে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র চালু রাখতে পারেন। মেয়াদ শেষ হলে তিনি নিয়ম অনুযায়ী নগদায়ন করে নিজের নামে নতুন সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
নতুন নমিনি যুক্ত করা যাবে কি?
না। ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সঞ্চয়পত্রের মালিকানা পেলেও নতুন করে আর কোনো নমিনি যুক্ত করতে পারবেন না। তবে মূল টাকা ভেঙে নিজের নামে নতুন সঞ্চয়পত্র কিনলে তখন পছন্দ অনুযায়ী নমিনি যুক্ত করা যাবে।
ক্রেতা ও নমিনি দুজনই মারা গেলে: এ ক্ষেত্রে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। আদালত যে উত্তরাধিকারীদের নির্ধারণ করে দেবেন, তাঁরাই সঞ্চয়পত্রের মালিকানা পাবেন।
কত ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে? জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু—
- পরিবার সঞ্চয়পত্র
- পেনশনার সঞ্চয়পত্র
- পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
- তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
পরিবার সঞ্চয়পত্র ছাড়া বাকি তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। মেয়াদপূর্তিতে এসব সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১.৯৮ শতাংশ থেকে ১১.৭০ শতাংশ। তবে মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙলে মুনাফা কমে যায়, তাই খুব জরুরি না হলে মেয়াদের আগে সঞ্চয়পত্র না ভাঙাই ভালো।
একক নামের পাশাপাশি যৌথ নামে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান—উভয় পর্যায়েই সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ খোলা। সুদের হার ভালো এবং ঝুঁকি কম হওয়ায় সঞ্চয়পত্র মধ্যবিত্তের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ সঞ্চয়মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।

