বাংলাদেশে নিরাপদ পানির সংকট দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ এখনও নিরাপদ পানির বাইরে। মাত্র ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ নিরাপদ ব্যবস্থাপনার আওতায় পানি পান করার সুযোগ পাচ্ছেন।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো—বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত পানির প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গেছে মারাত্মক ই. কোলাই দূষণ। পরিবারের স্তরে এই চিত্র আরও শঙ্কাজনক; প্রতি ১০টি পরিবারের পানি নমুনার মধ্যে ৮টিতেই (৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ) শনাক্ত হয়েছে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, যা লাখো শিশুকে প্রতিদিন ডায়রিয়া ও টাইফয়েডের মতো প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) এ ভয়াবহ বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছে।
এমন পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স দেশের টিকা কর্মসূচির সাফল্যে গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ক্যাম্পেইন ২০২৫-এ বাংলাদেশ সত্যিই অসাধারণ একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। আমরা ৯৭ শতাংশের বেশি শিশুর কাছে পৌঁছাতে পেরেছি— অর্থাৎ ৪ কোটি ২৫ লাখেরও বেশি শিশুকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে টাইফয়েড প্রতিরোধে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অগ্রগামী দেশগুলোর কাতারে উঠে এসেছে। বিশ্বের অষ্টম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই জীবনরক্ষাকারী ক্যাম্পেইন চালু করেছে—এ অর্জনে দেশটি গর্ব করার মতো।”
রানা ফ্লাওয়ার্স অভিভাবকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, “শিশুর স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে টিকা গ্রহণে অভিভাবকদের যে ইতিবাচক সাড়া, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি আরও জানান—৫ কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিসিভি টিকা দেশে সরবরাহ করা থেকে শুরু করে নতুন কোল্ড রুম স্থাপন, কোল্ড চেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সময়মতো শিশুর কাছে টিকা পৌঁছানো নিশ্চিতে ভ্যাক্সইপিআইয়ের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার—সবকিছুতেই ইউনিসেফ ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করেছে।
রানা ফ্লাওয়ার্সকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে ‘প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি’। তিনি বলেন, “শুধু শহর বা সহজলভ্য এলাকা নয়—জলাভূমি, উপকূলীয় অঞ্চল, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, ভ্রাম্যমাণ পরিবার, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু, আদিবাসী ও চা-বাগান সম্প্রদায়ের শিশু, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, এমনকি যৌনকর্মীদের সন্তান—সবাইকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতেও ৪ লাখ ২৪ হাজারের বেশি শিশুকে সুরক্ষিত করা গেছে।”
তিনি বাংলাদেশ সরকার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইপিআই কর্মসূচিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তাদের নিরলস প্রচেষ্টা ছাড়া এই কাজ সম্ভব হতো না।” পাশাপাশি গ্যাভি—দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সকে অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও অন্যান্য অংশীজনের অবদানকেও তিনি গুরুত্বসহকারে স্মরণ করেন।

