দেশের ঋণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা সতর্ক করেছেন, যদি প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্কার ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়ানো না যায়, বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রাজস্ব সংগ্রহ না বাড়ালে এবং আর্থিক শৃঙ্খলা না আনলে দেশটি ঋণের ফাঁদে আটকে যাবে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান আরও স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছি। এ বাস্তবতা স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।”
আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব মন্তব্য করা হয়। সেমিনারটি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এবং ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ ও উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এছাড়া ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন জিইডির সদস্য মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ঋণের ফাঁদে পড়া দেশের জন্য ভালো হবে না। এক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে আবার নতুন ঋণ নিতে হবে। ইতিমধ্যেই বাজেটে সবচেয়ে বড় ব্যয় হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন। এরপর আসে কৃষি ও শিক্ষা খাত। কিন্তু এখন কৃষি ও শিক্ষা পেছনে পড়ে ঋণের সুদ সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করেছে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, কয়েক বছর আগে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে। তিনি বলেন, “সমস্যার মূল কারণ হলো জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে।” তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুটি সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকের সংযুক্তি প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে। ডিপোজিট গ্যারান্টি ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আমানতকারীদের মধ্যে অর্থ বিতরণ শুরু হতে পারে।
সরকারের এ উদ্যোগে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকসহ ৭৬ লাখ পরিবার তাদের আমানত ফেরত পাবেন। নতুন ব্যাংক প্রথম বা দ্বিতীয় বছরেই মুনাফা দেখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।

