বৈদেশিক ঋণে নেওয়া ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ এখনো অর্ধেক বাকি। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আড়াই বছর বাড়ানো হচ্ছে এবং ব্যয় আরও ১৭৮ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদিত ৩৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পের লক্ষ্য ঢাকায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (এসটিপি-২) স্থাপন, উদ্ভাবনী সংস্কৃতি প্রসার, বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সরকারের অংশীদারিত্ব ছিল ৯৮ কোটি ৬ লাখ টাকা, আর বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছিল ২৫৫ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ এবং ব্যয় হয়েছে ১২১ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একনেক সর্বশেষ বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে আরও ১৭৮ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করেছে, ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে ৫৩১ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৪৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ৮১.৫৪ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘমেয়াদে দেশি ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জনগুরুত্বপূর্ণ ছাড়া বৈদেশিক ঋণে প্রকল্প নেওয়া উচিত নয়। সরকারের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।” পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, “বর্তমানে নতুন বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হচ্ছে না, চলমান প্রকল্প শেষ করতে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে।”
প্রকল্পের আওতায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই অবকাঠামোর নতুন সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান এসটিপি-১ সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হবে। নতুন পার্কটি লিড গোল্ড সার্টিফায়েড ভবন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবন হাব স্থাপনের সংখ্যা ১০টি থেকে বাড়িয়ে ২৪টি করা হয়েছে। এসব হাবে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য থ্রিডি প্রিন্টার, সিএনসি মেশিন, আর্ডিনো কিট, রোবোটিক্স ও ড্রোন-সংক্রান্ত সরঞ্জামসহ আধুনিক ল্যাব থাকবে। স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ১৪টি বিশেষায়িত কমন ল্যাব স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে প্রায় ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশা করা হচ্ছে। এছাড়া স্টার্টআপ ও স্কেলআপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির গতি বাড়বে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, ডিপিপি অনুমোদন ও ঋণচুক্তি কার্যকর করতে বিলম্ব, জমি বরাদ্দ ও মামলা জটিলতা, পিডব্লিউডির নতুন রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় সমন্বয়, লিড সার্টিফিকেশন প্রস্তুতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন হাব ও স্টার্টআপ কর্মসূচি বিস্তৃত হওয়ায় প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়াও ব্যয় পুনর্গঠনের একটি কারণ।
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) মত, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জাতীয় উদ্ভাবন সংস্কৃতি শক্তিশালী হবে, আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। প্রকল্প পরিচালক আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান জানান, “নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, নতুন মেয়াদে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হবে।”

