চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল আরও শক্তিশালী হলো। ১৪টি নতুন রাবার-টাইয়ার্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন যুক্ত হওয়ার ফলে কনটেইনার ওঠানামার গতি বেড়ে গেছে এবং টার্মিনালের সামগ্রিক কার্যক্রম আরও দক্ষ হয়েছে।
চীনের জেনমা প্রতিষ্ঠান নির্মিত এই ক্রেনগুলো গত অক্টোবরে বন্দরে পৌঁছায়। কমিশনিং প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর গতকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রেনগুলো সৌদি অপারেটর রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মাজহারুল ইসলাম জুয়েল, বে টার্মিনাল প্রকল্প পরিচালক কমোডর মাহফুজুর রহমান, আরএসজিটিআই চট্টগ্রামের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এনি লেন এবং জেনমা সল্যুশনসের জেনারেল ম্যানেজার সুসান ঝা। অনুষ্ঠানে সুসান ঝা প্রতীকী চাবি হস্তান্তর করে ক্রেনগুলো আরএসজিটিআই সিওও এনি লেনের কাছে তুলে দেন।
গেল বছরের জুনে ২২ বছরের কনসেশন চুক্তির আওতায় আরএসজিটিআই পরিচালনা করা এই টার্মিনাল কয়েক মাসের দুর্বল পারফরম্যান্সের পর সম্প্রতি ধারাবাহিক উন্নতি দেখাচ্ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে আরএসজিটিআই নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ লাখ ডলার ব্যয়ে একটি আমদানি কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপন করলে কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য গতি আসে। দীর্ঘদিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই যন্ত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টার্মিনালটি মোট ১ লাখ ৮ হাজার ২২৮ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে, যা এর প্রাথমিক ১৬ মাসের কার্যক্রমের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। অক্টোবরের মাসিক কার্গো হ্যান্ডলিং রেকর্ড ২৫ হাজার ১৮ টিইইউতে পৌঁছায়, যা সেপ্টেম্বরের ১৭ হাজার ৩৩৭ টিইইউ থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। জাহাজ আগমনের সংখ্যাও বেড়েছে; শুধু আগস্ট মাসেই সাতটি জাহাজ ভিড়েছে। তবে এ অগ্রগতির পরও টার্মিনাল এখনও তার নকশা অনুযায়ী সক্ষমতার অনেক নিচে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অক্টোবর মাসে ব্যবহার মাত্র ৪৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে মাসিক তাত্ত্বিক সক্ষমতা ৪১ হাজার ৭০০ টিইইউ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আরএসজিটিআই জানায়, কনসেশন চুক্তির মান উন্নয়ন ধাপ এবং চলমান যন্ত্রপাতি স্থাপনের কারণে ধীরে ধীরে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমোডর মাহফুজুর রহমান বলেন, “সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালানোর পরও তারা টার্মিনাল পরিচালনায় সুশৃঙ্খল ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বজায় রাখছে। এটি প্রশংসনীয় এবং আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।” তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের আন্তর্জাতিক মান উন্নয়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আশা প্রকাশ করেন, আরএসজিটিআই ভবিষ্যতেও বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে অবদান রাখবে।
আরএসজিটিআই-এর বাণিজ্যিক ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সৈয়দ আরেফ সারওয়ার জানান, নতুন ১৪টি আরটিজি ক্রেন যুক্ত হওয়ায় টার্মিনালের কার্যক্রম আরও দ্রুত হবে। তিনি বলেন, “আগামী বছরের মে মাসের শেষ নাগাদ আরও চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হলে আমরা পূর্ণাঙ্গ পরিচালন সক্ষমতায় পৌঁছাতে পারব।”

