বেসরকারি গবেষণা সংস্থা র্যাপিড পরবর্তী সরকারের জন্য আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১২টি প্রধান অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছে। সংস্থার মতে, বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় নির্বাচিত সরকারকে প্রথম বছরে দৃঢ় ও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “পরবর্তী সরকারের জন্য সামাজিক অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার” শীর্ষক সেমিনারে এই অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
ড. রাজ্জাক আগামী সরকারের জন্য প্রধান ১২টি অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন–
- এলডিসি উত্তরণ: সময় বাড়ানো বা শক্তিশালী প্রস্তুতি।
- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
- ব্যাংক ব্যবস্থার পুনর্গঠন।
- কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
- বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি।
- সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি।
- স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি।
- সরকারের ঋণের চাপ কমানো।
- জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।
- তথ্য-উপাত্তে স্বচ্ছতা।
- ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি।
তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক রিজার্ভ এবং এলডিসি উত্তরণ—এই চারটি ক্ষেত্রে পরবর্তী সরকারকে শুরুতেই অজনপ্রিয় হলেও কঠিন নীতি নিতে হবে। নীতি গ্রহণে দেরি হলে ভবিষ্যতে অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, “উন্নত দেশগুলো জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে পারে। কারণ তাদের কর-জিডিপি অনুপাত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। আমরা মাত্র ৬ শতাংশ কর-জিডিপি অনুপাত দিয়ে কীভাবে স্বাস্থ্যে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করব? আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হলে ঋণের বোঝা বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক।” তিনি জানান, রাজস্ব আধুনিকীকরণের মাধ্যমে এই চাপ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) পদ্ধতির প্রসঙ্গে বলেন, দেশে উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে কর ছাড়ের মাধ্যমে মোবাইলের দাম কমানো সম্ভব।
সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী মন্তব্য করেন, “বৈষম্য কমানো যায়নি। বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে। আগের সরকার প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়ন করেনি।”
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করবে বলে আশা করেছিলাম, হয়নি। বরং মব সংস্কৃতি বেড়েছে। ব্যবসা করা কঠিন হচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগও আসছে না। নতুন সরকারের পদক্ষেপের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।”
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।

