Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Tue, Dec 16, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » বাঙালি স্বায়ত্তশাসনের অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করেছেন নুরুল ইসলাম
    অর্থনীতি

    বাঙালি স্বায়ত্তশাসনের অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করেছেন নুরুল ইসলাম

    মনিরুজ্জামানDecember 16, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ( ১৯২৯—২০২৩)
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠনে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম অন্যতম। তিনি, রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান ও মোশাররফ হোসেন—এই চারজন অর্থনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বুদ্ধিবৃত্তিক রসদ সরবরাহ করেছেন।

    চারজনের মধ্যে নুরুল ইসলাম ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ। সাহস ও তেজস্বিতায় তিনি অনন্য। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এই চারজন অর্থনীতিবিদ গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দিয়েছেন। এর আগে পাকিস্তানে যে দুই ধরনের অর্থনীতি ও সমাজ গড়ে উঠেছে, তা তথ্য ও প্রমাণের মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন তাঁরা। রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তির সমন্বয় কতটা কার্যকর হতে পারে, তা বাঙালি ১৯৬০-এর দশকেই দেখেছে।

    অর্থনীতিবিদদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ছয় দফার দাবী চার বছরের মধ্যে এক দাবানলের মতো বিস্তার পায়। নুরুল ইসলাম ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তখন থেকেই তিনি পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে গণপরিসরে আলোচনা শুরু করেন। বৈষম্যের বিষয়টি উন্মোচন করতে ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানে পরিকল্পনা পর্ষদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এই প্রবন্ধের মূল রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলামের বিশ্লেষণ ও তত্ত্ব শুধু অর্থনীতি নয়, জাতীয় আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকেও নতুন মাত্রা দিয়েছে। তার অবদান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে স্থায়ী চিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে।

    নুরুল ইসলামের প্রবন্ধ:

    নুরুল ইসলাম এবং সহকর্মী অর্থনীতিবিদদের সেই প্রবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে উচ্চ যাতায়াত ব্যয়ের কারণে শ্রমিকদের চলাচল সীমিত। ফলে দেশের একটি অংশের উন্নয়ন অন্য অংশের শ্রমিকদের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না।

    প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, পশ্চিম পাকিস্তানে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, তার অনেকাংশ আসে পূর্ব পাকিস্তানের সঞ্চয় থেকে। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনায় ধরে নিতে হবে, পাকিস্তান দুইটি অর্থনৈতিক ইউনিট নিয়ে গঠিত। তবে সব ক্ষেত্রে দুই ইউনিট ধরা যাবে না। বিশেষত অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি সম্পদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে একক ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

    শুধু শ্রমিকের যাতায়াত নয়, দুই অংশের মধ্যে পণ্যের চলাচলেও সময় ও ব্যয়ের কারণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ফলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনেকাংশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মতো কার্যকর হচ্ছে। প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, উন্নয়ন ব্যয় এবং অনুন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে দুই অংশের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। তাই আঞ্চলিক ব্যয় বরাদ্দের দিক থেকেও ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। এই প্রবন্ধের তত্ত্ব পরবর্তীতে বিভিন্ন ফোরামে আলোচিত হয়। অর্থনীতিবিদরা নিয়মিত এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রবন্ধটি পাকিস্তানের দুই অর্থনীতির বৈষম্যকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

    আইয়ুব খানের সঙ্গে প্রাতরাশ:

    দুই অর্থনীতির তত্ত্ব একসময় পাকিস্তানের শাসক আইয়ুব খানের নজরে আসে। কিন্তু সরাসরি বিষয়টি আলোচনায় আসে ১৯৬১ সালে, যখন আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। তখন নুরুল ইসলাম পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদদের প্রাতরাশে আমন্ত্রণ জানান। প্রাতরাশে উপস্থিত আইয়ুব খান আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের দুর্দশা তাদের নিজ কারণেই হয়েছে। তিনি মনে করেন, অর্থনীতিবিদরা অযৌক্তিক অভিযোগ করছেন। তাই তিনি সরাসরি অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান খুঁজতে চান।

    ‘দুই অর্থনীতির’ তত্ত্ব আইয়ুব খানের কাছে ‘দুই জাতির’ তত্ত্বের মতো মনে হয়। আলোচনায় নুরুল ইসলাম ও অন্যান্য অর্থনীতিবিদ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। সব শুনে আইয়ুব খান নির্দেশ দেন, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা তাদের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণসহ প্রতিবেদন জমা দেবেন।

    নুরুল ইসলানের মতে, সেই প্রতিবেদনের মধ্যে বাঙালির মুক্তির সনদ—ছয় দফার বীজ—নিহিত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা যথাসময়ে ‘ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব ইস্ট পাকিস্তান’ শিরোনামে প্রতিবেদন জমা দেন। তবে আইয়ুব খানের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া বা প্রতিক্রিয়া আসে না। নুরুল ইসলাম পরে জানতে পারেন, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যানের কথায় আইয়ুব খান সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

    তার স্থির মত ছিল—প্রতিবেদনটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক দিকেও গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১ দফার ১৯ নম্বর দফায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছিল না। নুরুল ইসলাম বলেন, “‘এক দেশ, দুই নীতি’ তত্ত্ব সেই শূন্যতা পূরণ করল।”

    যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার পরিপূরক:

    পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও বৈদেশিক মুদ্রা যে অংশে তৈরি হবে, সেটি সেই অংশে থাকবে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ১৯ নম্বর দফায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছিল না। নুরুল ইসলাম বলেন, “‘এক দেশ, দুই নীতি’ তত্ত্ব সেই শূন্যতা পূরণ করল।”

    ১৯৬৪ সালে নুরুল ইসলাম পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস (পিআইডিই)-এ যোগ দেন। এটি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তান সরকার পিআইডিই নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করত না, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে নুরুল ইসলাম বৈষম্যের উপাত্ত সংগ্রহের সুযোগ পান।

    অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম ২০২৩ সালের ৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রয়াত হন। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আত্মজীবনী ‘অ্যান অডিসি: দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’, প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। নুরুল ইসলামের বিশ্লেষণ ও তত্ত্ব শুধু অর্থনীতির উন্নয়নে নয়, রাজনৈতিক আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকেও নতুন মাত্রা দিয়েছে। তার অবদান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে স্থায়ী চিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে।

    প্রচার-প্রচারণা:

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তাসনিম সিদ্দিকীর সঙ্গে আলাপে নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা শুধু নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হইনি। সভা-সমিতি ও সেমিনারের মাধ্যমে সেই জ্ঞান সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশও চলত।”

    এ বিষয়ে সবচেয়ে সিদ্ধহস্ত ছিলেন রেহমান সোবহান। নুরুল ইসলাম তাঁকে বলতেন ‘পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল’ বা গণবুদ্ধিজীবী। রেহমান সোবহান তখন ফোরাম নামের পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এতে হামিদা হোসেন, সালমা হোসেন প্রমুখ যুক্ত ছিলেন। ফোরামে ছাপা হতো নানা ধরনের লেখা। ছয় দফা আন্দোলন বা তার আগে থেকেই ফোরাম মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নুরুল ইসলাম আরও জানান, একপর্যায়ে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে অর্থনীতিবিদদের যোগাযোগ বাড়তে থাকে। ইত্তেফাকের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, পাকিস্তান অবজারভারের আবদুস সালাম, সংবাদের জহুর হোসেন চৌধুরীসহ অনেকে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য পত্রিকায় খবর ও সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশ করতেন। মানিক মিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে অনেক তথ্য সরাসরি বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছাত।

    ওই সময়ে ইত্তেফাকের সাংবাদিক মঈদুল হাসানও সভায় উপস্থিত থাকতেন। তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র এবং অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে তথ্যপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নুরুল ইসলানের ভাষ্য অনুযায়ী, “তুখোড় এই রাজনীতিবিদ চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত বুঝে নিতে পারতেন।” নুরুল ইসলামের এই প্রচার-প্রচারণা শুধু তথ্য পৌঁছে দেওয়া নয়, তা বাঙালির রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

    ছয় দফা :

    ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন তার বিখ্যাত ছয় দফা। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এটি ছিল বাঙালির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের ম্যাগনাকার্টা। অর্থনীতিবিদরা প্রায় এক দশক ধরে অভিযোগ করছিলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক সাহায্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ স্থানান্তরের মূল মাধ্যম। ছয় দফা সেই মাধ্যমগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তৈরি করেছিল। নুরুল ইসলাম আত্মজীবনী ও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলেছেন, আপাত অর্থে ছয় দফা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের কর্মসূচি।

    এর মাধ্যমে পূর্ব বাংলা তার বৈদেশিক বাণিজ্য ও আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। সরকারের আয় ও ব্যয়ের ওপরও নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মুদ্রা বা পুঁজির পাচার বন্ধ হবে। তবে ছয় দফার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সাধারণের জন্য সহজবোধ্য ছিল না। বিশেষজ্ঞদের জন্যই এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা উপলব্ধ ছিল।

    কার্যত ছয় দফা স্বাধীনতার পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। নুরুল ইসলামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎ ঘটে ১৯৬৯ সালের মার্চে। তখন তিনি করাচির পিআইডিতে কর্মরত ছিলেন। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু তাকে এক গোপন স্থানে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন। মজার বিষয়, সেই স্থানে ছিলেন একটি বিহারি সম্প্রদায়ের বাড়িতে। প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর বঙ্গবন্ধু সন্তুষ্ট হয়ে বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হলে সংসদে নতুন সংবিধান প্রস্তাব করবেন। তিনি নুরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন, ড. কামাল হোসেন, রেহমান সোবহান প্রমুখের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছয় দফাকে নতুন সংবিধানের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করবেন।

    এরপর আসে বাঙালির স্বাধীনতা। নুরুল ইসলাম বাংলাদেশে প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হন। তবে শেষমেশ তা সফলতার মুখ দেখেনি এবং তিনি বিদেশে চলে যান। জীবনশেষ হয় বিদেশে হলেও তার চিন্তাজুড়ে সবসময় ছিল নিজের জাতি ও মানুষ।

    অর্থনীতিবিদদের ভূমিকা সম্পর্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক সেলিম জাহান বলেন, “বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বিমাতাসুলভ আচরণ এবং জনমনে সৃষ্টি হওয়া ক্ষোভকে যুক্তির ভাষা দিয়েছেন নুরুল ইসলামসহ অর্থনীতিবিদরা। ছয় দফার ভিত্তি তাঁরাই রচনা করেছেন। বৈষম্য ও দুই অর্থনীতির বিষয়টি তারা অনেক আগে থেকেই তুলে ধরছিলেন, যদিও জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি।”

    সেলিম জাহান আরও জানান, পূর্ব পাকিস্তান ও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অর্থনীতিবিদরা অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে দুই পাকিস্তানের সমানসংখ্যক সদস্য নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। যৌথ প্রতিবেদন তৈরি করা তখন অসম্ভব হয়ে পড়লে তারা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

    পরিপূর্ণ অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী:

    ২০২৩ সালের ৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম মারা যান। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আত্মজীবনী ‘অ্যান অডিসি: দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’, প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। ২০১৮ সালে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দেশের আরেক কৃতী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, “নুরুল ইসলাম একজন পরিপূর্ণ অর্থনীতিবিদ। আমি মনে করি, বাংলাদেশের অমর্ত্য সেন হতে পারার যোগ্যতা তাঁর ছিল। তবে নীতিনির্ধারণী ভূমিকা নেবেন নাকি পেশাদার অর্থনীতিবিদ হবেন—এই দ্বন্দ্ব তিনি সারা জীবন কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এই কারণে একজন বিশ্বমানের বাঙালি অর্থনীতিবিদ থেকে বিশ্ব বঞ্চিত হয়েছে।”

    রেহমান সোবহান আরও উল্লেখ করেন, নুরুল ইসলানের বিশ্লেষণী ক্ষমতা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের চেয়েও বেশি। আর্থসামাজিক বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণ অসাধারণ। দীর্ঘ সময় বিদেশে কাটালেও তিনি সবসময় দেশের জন্য গভীরভাবে ভাবতেন, চিন্তা করতেন। ওয়াশিংটনে বসে তিনি যা ভাবতেন, ঢাকায় বসে ভাবলে তা আরও বেশি ফলপ্রসূ হত। তবু বাংলাদেশ কখনোই তাঁর চিন্তার বাইরে ছিল না।

    নুরুল ইসলামের জীবন ও অবদান প্রমাণ করে, একজন অর্থনীতিবিদ কেবল অর্থনীতি বোঝার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, তিনি জাতীয় আন্দোলন ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক দিকনির্দেশনাও দিতে পারেন।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    চার বছরের মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পাটপণ্য রপ্তানি

    December 16, 2025
    অর্থনীতি

    অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রকৃত চিত্র সামনে এনেছিলেন রেহমান সোবহান

    December 16, 2025
    অর্থনীতি

    মধ্যরাতের জারি আদেশে কমিশনার হলেন ৮ শুল্ক কর্মকর্তা

    December 16, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.