বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশের অর্থনীতিবিদরা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তারা শুধু পরামর্শ দিয়েছেনই না, জনমত গঠনে লিখন ও যুক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করেছেন। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন রেহমান সোবহান। তিনি লেখালিখিতে তৎপর থাকায় জনমতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছেন।
নুরুল ইসলাম রেহমান সোবহানকে ‘প্রচারকের মতো’ অভিহিত করেছেন, কারণ তাঁর লেখালিখি ও বিশ্লেষণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য প্রমাণিত করতে অর্থনীতিবিদরা তথ্য ও যুক্তির মাধ্যমে দেশের জনগণকে সচেতন করেছেন।
তাদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একটি পোস্টার ছাপায়, যার শিরোনাম ছিল ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’। এতে দুই পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন খাতে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়। এই পোস্টার সারা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।
দুই অর্থনীতির বৈষম্য নিয়ে নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৯৫৬ সালে দেশের অর্থনীতিবিদরা প্রথম প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এরপর বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি আলোচনা হয়। তবে এই অর্থনীতির তত্ত্বকে সর্বজনীনভাবে জনপ্রিয় করতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন রেহমান সোবহান।
প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান স্মরণ করেন, “পরদিন সকালে পাকিস্তান অবজারভার খুলে দেখি প্রথম পাতার শিরোনাম এ রকম: ‘রেহমান সোবহান বলেছেন, পাকিস্তানে বর্তমানে দুই অর্থনীতি বিদ্যমান’। এই সংবাদ ছাপা হওয়ায় সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়।”
১৯৬১ সালের জুনে কার্জন হলে রেহমান সোবহান ও নুরুল ইসলাম দুই অর্থনীতি তত্ত্বের ওপর একটি সেমিনার আয়োজন করেন। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের উপপ্রধান হাবিবুর রহমান। রেহমান সোবহান সেমিনারে দুই অর্থনীতির ওপর একটি নিবন্ধ পাঠ করেন। নুরুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমানও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে অজানা কারণে সাংবাদিকদের দৃষ্টি বেশি আকর্ষণ করে রেহমান সোবহানের নিবন্ধ।
সেমিনারের দিনই ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরেন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান। সাংবাদিকরা দুই অর্থনীতি নিয়ে তাঁর মত জানতে চান। পাকিস্তান অবজারভার রেহমান সোবহানের মন্তব্যের পাশেই আইয়ুব খানের প্রতিক্রিয়াও বড় হরফে ছেপে দেয়: ‘আইয়ুব খান বলেছেন, পাকিস্তানের একটাই অর্থনীতি’। রেহমান সোবহান মনে করেন, এই ঘটনাটি একটি ইঙ্গিত বহন করেছিল। সেটা হলো, পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনমতের ধারা পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে। পরে এই প্রক্রিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
রেহমান সোবহান জনমত গঠনের গুরুত্ব বোঝেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি কামাল হোসেন, হামিদা হোসেন ও জিয়াউল হক টুলুকে সঙ্গে নিয়ে একটি সাপ্তাহিক ফোরাম গঠন করেন। রেহমান সোবহান ছিলেন ফোরামের নির্বাহী সম্পাদক এবং হামিদা হোসেন ছিলেন সম্পাদক।
রেহমান সোবহান জানান, ১৯৬১ সালের শেষ দিকে ‘কীভাবে একটি সুসংগঠিত পাকিস্তান গড়ে তোলা যায়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তাঁকে বক্তব্যের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেমিনারের আয়োজক ছিল বিএনআর। সামরিক শাসকরা সংস্কারক ও দেশনির্মাতা হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে বিএনআর ছিল অন্যতম। রেহমান সোবহান বলেন, “আইয়ুব খান যদি তাঁর সরকারের রাজনীতিকরণে উদ্যোগী হতেন, বিএনআর আরও বেশি রাজনৈতিক ভূমিকা নিত। এটি একটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়েছিল। অনুমানটি ছিল, নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইসলামি পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ধারণা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সেই নাগরিকদের বড় অংশ বাঙালি। তবে এই বিচ্ছিন্নতার পেছনে কিছু বুদ্ধিজীবীর অপপ্রচারের ভূমিকা ছিল।”
বিএনআর ভেবেছিল, দুই প্রান্তের বুদ্ধিজীবীদের একত্র করলে তাঁরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। পাশাপাশি পাকিস্তান রাষ্ট্রের যৌক্তিকতাও উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। রেহমান সোবহান বলেন, “কিন্তু আমার লেখা পড়ে বিএনআর নিশ্চয়ই বিস্মিত হয়েছিল। আমার যুক্তি ছিল, পাকিস্তান রাষ্ট্র যদি দুই খণ্ডের নীতিনির্ধারণে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিত, তাহলেই সংহতি রক্ষা সম্ভব হতো। উভয় অংশ নিজস্ব রাজস্ব আদায় ও রপ্তানি বাণিজ্যের আয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তখন পর্যন্ত পাকিস্তানের অর্ধেকের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস ছিল পূর্ব পাকিস্তান।”
তিনি আরও বলেন, “যদি পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন না দেওয়া হয় এবং বছরের পর বছর বৈষম্য বাড়তে থাকে, পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিপন্ন হবে। পাকিস্তানকে একটি সংগঠিত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।”
ফোরাম গঠন ও সাংবাদিকতা:
পাকিস্তান অবজারভার যেভাবে দুই অর্থনীতির তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেছিল, তা দেখে রেহমান সোবহান জনমত গঠনের গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম হন। সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি কামাল হোসেন, হামিদা হোসেন ও জিয়াউল হক টুলুকে সঙ্গে নিয়ে একটি সাপ্তাহিক ফোরাম গঠন করেন। রেহমান সোবহান ছিলেন এর নির্বাহী সম্পাদক এবং হামিদা হোসেন ছিলেন সম্পাদক।
ফোরামের প্রথম গ্রাহক হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৯ সালের ২২ নভেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পুরো বছরের চাঁদা দিয়ে ফোরামের গ্রাহক হন। রেহমান সোবহান এই পত্রিকাকে জনমত গঠনের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। নিবন্ধ লেখার পাশাপাশি তিনি মাঠে ঘুরে প্রতিবেদনও লিখেছেন। পাকিস্তান সরকারের অবস্থান সমালোচনা এবং বাঙালিদের আকাঙ্ক্ষা যুক্তি-ভিত্তিকভাবে তুলে ধরাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।
অর্থনীতিবিদ ও মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক সেলিম জাহান ব্যক্তিগত আলাপে জানান, ওই সময় ফোরাম নিউ মার্কেটে আসামাত্র বিক্রি হয়ে যেত। বড়জোর ৩০ মিনিটের মধ্যে সব কপি শেষ হয়ে যেত। অনেকটা সিনেমার কাগজের মতো তাত্ক্ষণিক জনপ্রিয়তা ছিল ফোরামের।
সাংবাদিকতা করলেও রেহমান সোবহান শিক্ষাবিদ হিসেবে নিজ ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে সমস্যায় পড়া ছাত্রনেতাদের সহায়তা করাও ছিল তাঁর দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী লক্ষ্য ব্যাহত না হওয়ার বিষয়টি তিনি ছাত্রনেতাদের পরামর্শ দিয়ে নিশ্চিত করতেন।
আজও অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান লেখা ও চিন্তার জগতে সক্রিয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি জাতির কল্যাণে কাজ করেছেন। জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। নিয়মিত সভা-সেমিনারে অংশ নেওয়া এবং লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ায় রেহমান সোবহানের জীবন চিরস্মরণীয় ও মুখর।
১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার:
বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন রেহমান সোবহান। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন।
ইশতেহারে শিল্প জাতীয়করণের পরিকল্পনা ছিল। এছাড়া শিল্পকারখানার ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কাঠামোও প্রস্তাবিত হয়েছিল। ভূমি সংস্কার এবং বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠনের বিস্তর কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত ছিল। রেহমান সোবহান মনে করেন, এসব প্রস্তাব অনেক বামপন্থী দলের ইশতেহারের চেয়ে বেশি বৈপ্লবিক ছিল।
তবে ইশতেহার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যেভাবে অনুমোদিত হয়েছে, তা দেখে রেহমান সোবহানসহ অন্যরা বিস্মিত হন। কার্যত কেউ তাঁর বিরোধিতা করেননি। তিনি মনে করেন, সম্ভবত বঙ্গবন্ধুই চেয়েছিলেন ইশতেহার নির্বিঘ্নে পাস হোক। রেহমান সোবহান ও নুরুল ইসলাম উভয়েই ১৯৭০ সালের ৬ জুন অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন।
বাস্তবতা হলো, ইশতেহার নিয়ে তর্কবিতর্ক না হওয়ায় তারা বিস্মিত হন। কারণ এই ইশতেহারের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। নির্বাচনের আগে, ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর, বঙ্গবন্ধুর ৩০ মিনিটের ভাষণের খসড়া প্রণয়নে রেহমান সোবহান তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মূলত কামাল হোসেন ও রেহমান সোবহান নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের নেতৃত্ব দেন। তবে নুরুল ইসলাম, স্বদেশ বোস, এ আর খান প্রমুখ সহকর্মীর পরামর্শও নেওয়া হয়। এরপর নির্বাচনী প্রচারণায় রেহমান সোবহান বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়ে অনেক জনসভায় অংশ নেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রেহমান সোবহান ১৯৬৬ সালে পিএইচডি করতে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। কেমব্রিজ থেকে ফেরার পর তিনি পড়াশোনার চেয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতনের পর ইয়াহিয়া খানের সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা তাঁর রক্ত চনমনে করেছিল। তাই পিএইচডি না করে দেশে ফিরে আসেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে যোগ দেন।
বিদেশে প্রচারণা ও অর্গানিক বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা:
স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে রেহমান সোবহান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রথম ভারতে যান। এরপর যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা করেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে তিনি বহির্বিশ্বে বক্তৃতা দিয়েছেন এবং প্রচারণা চালিয়েছেন।
রেহমান সোবহানের পরামর্শে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পনা সেল গঠন করে। পরবর্তীকালে সেটি পরিকল্পনা কমিশনে পরিণত হয়। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় রেহমান সোবহান তাজউদ্দীন আহমদকে অবগত করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ পরিকল্পনা সেল গঠনের উদ্যোগ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা ও জনমত গঠনে চার অর্থনীতিবিদ সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আজ শুধুমাত্র রেহমান সোবহানই জীবিত। তিনি এখনও লেখা ও চিন্তার জগতে সক্রিয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে জাতির কল্যাণে কাজ করেছেন। জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। নিয়মিত সভা-সেমিনার ও লেখালেখিতেও তিনি অংশ নেন।
ইতালীয় মার্কসবাদী চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক আন্তোনিও গ্রামসি অর্গানিক বুদ্ধিজীবীর তত্ত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, যে বুদ্ধিজীবীরা কেবল শ্রেণিকক্ষ বা পাঠদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হন, তাঁরা অর্গানিক বুদ্ধিজীবী।
এই আলোকে রেহমান সোবহানকে অর্গানিক বুদ্ধিজীবী বলা যায়। তিনি কেবল শ্রেণিকক্ষ বা গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ থাকেননি। বরং পূর্ব বাংলার মানুষের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক বঞ্চনা, আঞ্চলিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক অধিকারহীনতাকে তত্ত্ব ও তথ্যের ভাষায় তুলে ধরেছেন। তাঁর বিশ্লেষণ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে যুক্তি, আত্মবিশ্বাস ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিশা দিয়েছে। শাসক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠিত আধিপত্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পাল্টা বয়ান গড়ে তোলায়ও ভূমিকা রেখেছেন।
এককথায়, রেহমান সোবহান মুখর জীবন যাপন করেছেন এবং করছেন।
সূত্র: প্রথম আলো

