স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ৫৪ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতি, মানব উন্নয়ন এবং সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ—সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এখন এগিয়ে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম ছিল। এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে মাথাপিছু জিডিপিতে পেছনে ফেলে, আর ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় ৭০ শতাংশ এগিয়ে।
মানব উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
মানব উন্নয়ন সূচকের দিক থেকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি স্পষ্ট। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে জাতিসংঘের সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন ১২৯তম স্থানে, পাকিস্তান ১৬১ নম্বরে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক প্রভাব এখনও দৃঢ়ভাবে বিদ্যমান, যেখানে শেষ সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর হাতে থাকে। বাংলাদেশে যদিও কিছুবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে, তবে ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে ধারাবাহিকভাবে বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের অগ্রগতি পাকিস্তানের তুলনায় দ্রুত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মানব উন্নয়ন বলতে বোঝায়—স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন। স্বাধীনতার সময় আমরা খুব পিছিয়ে ছিলাম, এখন এই সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছি।”
মাথাপিছু আয়: পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৮০ টাকা (৯৪ মার্কিন ডলার)। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ১,০৫৪ ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী মাথাপিছু আয় ২,৮২০ ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের সর্বশেষ মাথাপিছু জিডিপি ১,৪৭১ ডলার, বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।
রপ্তানি আয়: বিশ্ব মানচিত্রে এগিয়ে
বাংলাদেশ এখন পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয় ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ১৬.৬ বিলিয়ন ডলার। মোট পণ্য ও সেবা রপ্তানিতে বাংলাদেশ ৪,৮২৮ কোটি ডলার করেছে, পাকিস্তান ৩,২১১ কোটি ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে শক্ত অবস্থান
নভেম্বর ২০২৪-এ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.১২ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ১৯.৭ বিলিয়ন ডলার। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে পাকিস্তান সাময়িকভাবে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ৩৭.৩ শতাংশ, বর্তমানে তা ৫ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশে একই সময়ে মূল্যস্ফীতি ৮.২৯ শতাংশ।
প্রবাসী আয়: পাকিস্তান সামান্য এগিয়ে
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়েও পাকিস্তান সামান্য এগিয়ে। দক্ষ শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থ পাকিস্তানের রেমিট্যান্সকে বৃদ্ধি দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তুলনামূলকভাবে কম দক্ষ শ্রমিক বিদেশে যায়।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “স্বাধীনতার সময় আমরা পাকিস্তান থেকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হয়েছিলাম। এখন আমাদের লক্ষ্য শুধু পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়া নয়, দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক শাসন নিশ্চিত করতে হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হলে অগ্রগতি আবারও ত্বরান্বিত হবে।”

