রাজস্ব আয়ের টাকা দিয়ে সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মেটানো সম্ভব না হওয়ায় প্রতি বছরই দেশীয় ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। স্থানীয় ঋণের বড় অংশ আসে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে। সম্প্রতি ট্রেজারি বিলের সুদ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের সুদ ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যয় কমাতে সরকার শরিয়াহভিত্তিক ট্রেজারি বিলের দিকে ঝুঁকছে।
চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগ ২০ হাজার কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু করতে চায়। এ বিষয়ে কারিগরি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আগামী সপ্তাহে বাহরাইনে প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কর্মকর্তা।
অর্থ বিভাগের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) সাম্প্রতিক সভায় ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যুর বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদ হার বর্তমানে ১০ শতাংশের বেশি। ভারিত গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০.২৭ শতাংশ। স্বল্পমেয়াদি সুকুকের গড় ভাড়া হার ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ইসলামিক ট্রেজারি বিলের খরচ প্রচলিত ট্রেজারি বিলের তুলনায় ১.২০ শতাংশ কম হবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, ২০ হাজার কোটি টাকার ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু হলে প্রতি বছর আনুমানিক ২৪০ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হবে। প্রাথমিকভাবে সিডিএমসি কমিটি এ বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের পরিচালন ব্যয়ের ২৮ শতাংশই গেছে ঋণের সুদ পরিশোধে। এ সময়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ হয়েছে, যার মধ্যে স্থানীয় ঋণের সুদ ১ লাখ ১৬ হাজার ৬১৭ কোটি এবং বিদেশী ঋণের সুদ ১৭ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদ বাবদ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বণিক বলেন, ‘দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইসলামিক ট্রেজারি বিল বিক্রি হলে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক এবং ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে। বর্তমানে প্রচলিত ট্রেজারি বিল-বন্ডে তারা বিনিয়োগ করতে পারে না। ইসলামিক ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে এ সুযোগ তৈরি হবে।’
গত অর্থবছরে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে সরকার ৩ লাখ ৮১ হাজার ১২২ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এ সময়ে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার ট্রেজারি বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে নিট ঋণ হয়েছে ৪১ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়া হয়েছে।
বিশ্বের অনেক দেশে শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক পণ্যের বড় বাজার থাকলেও বাংলাদেশে এটি এখনও সীমিত। দেশে প্রধানত ইসলামী ব্যাংকের আমানতই শরিয়াহভিত্তিক মূল পণ্য। অন্যান্য ইসলামিক পণ্যের বিষয়ে অভিজ্ঞতা কম। এজন্য ইসলামিক ট্রেজারি বিল নিয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে চারজন অর্থ বিভাগ ও চারজন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ২১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর বাহরাইনে প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন।
বাহরাইনে যাচ্ছেন এমন কর্মকর্তাদের একজন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ইসতেকমাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ছয়টি সুকুক ইস্যু হয়েছে এবং সবই পাঁচ-ছয় গুণ ওভার সাবস্ক্রিপশন পেয়েছে। নতুন সুকুক ইস্যুর জন্য প্রায় এক বছর সময় লাগে। এই ফাঁকে যারা শরিয়াহভিত্তিক খাতে বিনিয়োগ করতে চান, তারা সুযোগ পায় না। তাই আমরা ৯১, ১৮২ ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু করতে চাই। প্রশিক্ষণের পর সামনের রমজানে একটি ইস্যুর লক্ষ্য রয়েছে।’

