বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২০২৪-এ গুরুতর আহত যোদ্ধা ও শহিদ পরিবারদের জন্য সরকার দুটি পৃথক আবাসিক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ২ হাজার ৩৬৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ হবে।
মিরপুর হাউজিং এস্টেটে মিরপুর ডিওএইচএস-সংলগ্ন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ভূমিতে ১ হাজার ৫৬০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট। ১৫টি ভবনের প্রতিটিতে ১৪ তলা থাকবে। বেজমেন্ট ও নিচতলায় গাড়ি পার্কিং থাকবে। ওপরের ১৩ তলায় প্রতিটিতে ৮টি ফ্ল্যাট থাকবে। সরকার আহতদের পুনর্বাসনের জন্য এই ফ্ল্যাটগুলো বিনামূল্যে দেবে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে। মোট খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে মিরপুর-১৪ এলাকায় শহিদ পরিবারের জন্য ‘৩৬ জুলাই’ নামে পৃথক প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এতে ৮০৪টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। ১৮টি ভবনের মধ্যে ছয়টি ১৪ তলা ভবনে ৬০০টি এবং ১২টি ১০ তলা ভবনে ২০৪টি ফ্ল্যাট থাকবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ৩৫৫ বর্গফুট। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ভবন নির্মাণেই খরচ হবে ৬৬২ কোটি টাকা। কাজ শুরু হবে জানুয়ারি ২০২৬ এবং শেষ হবে ডিসেম্বর ২০২৯।
প্রকল্প এলাকায় মোট ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩১৫ বর্গমিটার আয়তনের ভবন নির্মাণ করা হবে। থাকবে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং, উন্নতমানের লিফট, সাবস্টেশন, জেনারেটর, ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম, সিসি ক্যামেরা, ইন্টারকম, বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা ও সোলার সিস্টেমসহ আধুনিক সব সুবিধা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীনভাবে অনুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৯ জুন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে ৭ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু ক্ষেত্রে অসংগতি ধরা পড়লে সংশোধন করে ২২ জুলাই পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানো হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও মানসম্মত স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ফলে তারা স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে। প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।” তার সুপারিশের পর একনেক সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হলে সম্প্রতি সরকার অনুমোদন দেয়।
পিইসি সভায় অনুমোদনযোগ্য হলেও কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। ফ্ল্যাট বরাদ্দে প্রকৃত শহিদ পরিবার বা আহত, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় যাচাই বাধ্যতামূলক। পূর্বে সরকারি ফ্ল্যাট পেয়েছেন তাদের নতুন বরাদ্দ দেওয়া হবে না। বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাট বিক্রি, ভাড়া বা হস্তান্তর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভুয়া তথ্য দিলে বরাদ্দ বাতিল হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, “বিগত বহু বছর শহিদ পরিবারকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিচ্ছিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছে। এতে পুনরাবৃত্তি ও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। শহিদ পরিবারের প্রকৃত চাহিদা নির্ধারণ ও ন্যায্য পুনর্বাসনের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গড়ে ওঠেনি। এবার প্রথমবারের মতো সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ, সমন্বিত আবাসনব্যবস্থা তৈরি করতে যাচ্ছে। এটি শুধু ফ্ল্যাট বরাদ্দ নয়, বরং মর্যাদা, নিরাপত্তা ও জীবনমানের সঙ্গে যুক্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন নীতি।”
তিনি আরও বলেন, “এ উদ্যোগ শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা শহিদ পরিবারদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে নতুন নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। নেতৃত্ব দেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।”

