রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ ২০২২-২০৩৫) অনুযায়ী রাজধানীর কৃষিজমিতে আর আবাসন নির্মাণ করা যাবে না। এই বিধিনিষেধ ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী নিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. নুরুল আমিনের স্বাক্ষরে প্রজ্ঞাপনটি গত রোববার প্রশাসন শাখা-২ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটি ঢাকার বিশদ পরিকল্পনায় দ্বিতীয়বারের সংশোধনী।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কৃষিজমিতে সাধারণভাবে সব ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে শর্তসাপেক্ষে রাজউকের অনুমোদন নিয়ে কৃষিসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম—যেমন পোলট্রি ও গবাদিপশুর খামার, ফিশারি ইত্যাদির জন্য অস্থায়ী স্থাপনা এবং ইউটিলিটি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা যাবে।
বন্যাপ্রবাহ এলাকায় আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সেখানে ভায়াডাক্ট সড়ক ছাড়া কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। ড্যাপ ২০২২ সালের আগস্টে কার্যকর হয় এবং ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের প্রায় ১,৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা এর আওতায় আসে। প্রথম সংশোধনী ২০২২ সালের নভেম্বরে আনা হয়েছিল। সর্বশেষ এ সংশোধনীই দ্বিতীয়বার ড্যাপে পরিবর্তন এনেছে।
আগে ড্যাপে কৃষিজমিতে শর্তসাপেক্ষে একতলা ভবন নির্মাণ ও ক্ষুদ্র বা কুটির শিল্পের অনুমোদন ছিল। যুক্তি ছিল, আবাসন সংকটের কারণে অনেক কৃষককে নিজের জমিতেই বসবাস করতে হয়। তবে নগর পরিকল্পক ও পরিবেশবিদরা এ সুযোগকে দীর্ঘমেয়াদে জমি সংরক্ষণের জন্য হুমকি হিসেবে দেখতেন। বিশেষ করে কৃষিজমিতে রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ বা বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরির প্রবণতা বেড়ে যায়।
সংশোধিত ড্যাপে কৃষি-সম্পর্কিত কার্যক্রম ছাড়া অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পক মো. আশরাফুল ইসলাম বণিক বলেন, ‘ড্যাপে চিহ্নিত কৃষিজমিতে আবাসন প্রকল্পের নামে হোক বা ব্যক্তি উদ্যোগে, কোনোভাবেই আবাসিক বা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি নেই।’
ড্যাপের মানচিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ঢাকার বাইরে কেরানীগঞ্জ, সাভার, রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে ইতিমধ্যেই অনেক অবৈধ আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। আইনি অনুমোদন না থাকলেও জমি কেনাবেচা নিয়মিতভাবে চলছে।
রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কৃষিজমি মোট ৪৪,৬৩২.৭৪ হেক্টর, যা মোট জমির ২৯.২২ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকার কেন্দ্রীয় এলাকায় ৬২০.২৩, সাভারে ৯,৫৫৯.০৭, গাজীপুরে ১২,০৯৯.৪৮, নারায়ণগঞ্জে ৬,২৮৫.৯৫, রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জে ৮,০৫৩.২৪ এবং কেরানীগঞ্জে ৮,০১৪.৭৭ হেক্টর। এসব জমি সংরক্ষণের জন্য রাজউক আর কোনো ইমারত অনুমোদন দেবে না।
ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘রাজউকের এই সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া উচিত ছিল। তবে এটি যেন কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে।’
সংশোধনীতে ভবনের উচ্চতা, এলাকার জনঘনত্ব ও ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) সংশোধন করা হয়েছে। ২০ ফুট বা তার বেশি প্রশস্ত সড়কের পাশে ফার ২.৭৫ থেকে ৩.২৫ বৃদ্ধি পাবে। ৯ মিটার ৩০ ফুট সড়কের ফার ৩.২৫ থেকে ৩.৫ করা হয়েছে। পুরান ঢাকা, মগবাজার, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, আফতাবনগর-বনশ্রী, রাজাবাজার, শুক্রাবাদ ও পান্থপথে এলাকাভিত্তিক ফার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে অভিজাত এলাকার সঙ্গে অন্যান্য এলাকার ভবনের আয়তন বৈষম্য কমবে।
এছাড়া ড্যাপে এলাকাভেদে আবাসন ইউনিটের হার সামান্য বাড়ানো হয়েছে। পুরান ঢাকায় এটি ১.২ থেকে ২.৪ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৫ কাঠা জমিতে আগে ছয়টির পরিবর্তে এখন সর্বোচ্চ ১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যাবে।

