চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনেই প্রবাসীদের পাঠানো আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে এসেছে ২০০ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বর শেষে প্রবাসী আয় তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ডলার কেনা ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ায় রিজার্ভে এই ইতিবাচক গতি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ডিসেম্বর শেষে দেশের রিজার্ভ ৩৪ থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা অন্য কোনো সংস্থার ঋণ না নিয়ে নিজেদের উৎস থেকেই ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়ানো হচ্ছে। এটিই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, শুধু ১৭ ডিসেম্বরেই দেশে এসেছে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে এসেছিল ১৭৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে চলতি বছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৫০৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। ফলে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশে। গত নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার করে প্রবাসী আয় এসেছে। বিদায়ী মাসে তা তিন বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছায়।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত মার্চে রেকর্ড প্রবাসী আয় আসে। ওই মাসে দেশে আসে ৩২৯ কোটি ডলার, যা এখন পর্যন্ত একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ। এরপর আর কোনো মাসে ৩০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। তবে চলতি মাসে আবার নতুন রেকর্ড হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ এবং প্রণোদনা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। ফলে রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন তুলনামূলক স্বস্তিতে রয়েছে।

