দেশের পুঁজিবাজারের অচলাবস্থা ব্যাংক খাতের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যাংক এখন তিন মাস বা ছয় মাসের জন্য আমানত পায়। এক বছরের বেশি সময়ের জন্য আমানত পাওয়া কঠিন। এই স্বল্পমেয়াদের আমানত দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিতে হচ্ছে। পুঁজিবাজার কার্যকর না থাকায় ব্যাংকিং খাতে চাপ বেড়েছে।” গত বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টনে ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্যিক ব্যাংক যা করার কথা, তা না করে অন্য কাজ করছে। মূলত তাদের কাজ হলো তিন থেকে ছয় মাসের জন্য বিনিয়োগ করা। কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেট কার্যকর না থাকার কারণে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।”
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ২০১৮-১৯ সালে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করে দেশের শিল্পায়ন হয়েছে। তবে ২০১৭ সাল থেকে খেলাপি ঋণ হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। “২০০৮ সালে খেলাপি ঋণের অবস্থা ভালো ছিল, প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার মতো। কিছু খারাপ ঋণ অবশ্য ছিল। ইসলামী ব্যাংক দখল নেওয়ার পর ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। তখন থেকে একটা মাফিয়াতন্ত্র তৈরি হয়।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেড় দশকের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “রিজার্ভ যেটা কমছিল, এখন বাড়ছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে না, বরং মার্কেট থেকে কিনছে। ডলারের অস্থিরতা এখন নেই। ডলার রেট বাজারভিত্তিক করার পর যেই ধারণা ছিল যে রেট অনেক বেড়ে যাবে, সেটা হয়নি।”
খেলাপি ঋণ কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতের সব সমস্যা ব্যাংক পরিবর্তন করলেই সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা জরুরি। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঋণগ্রহীতাদের ভাবা উচিত যে টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে।” তিনি আরও জানান, সরকার যদি ব্যাংক থেকে নিয়মিত ঋণ নেয়, তবে বেসরকারি খাত সংকুচিত হবে এবং চাপ সব ব্যাংকের ওপর পড়বে।
সেমিনারের আয়োজন করেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বে ছিলেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

