এক দফা সময় বাড়ানোর পর ৩১ ডিসেম্বর করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার শেষ দিন নির্ধারিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করদাতাদের তাদের বার্ষিক আয় ও ব্যয়ের তথ্য দিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে।
এবার কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবাইকে অনলাইনে রিটার্ন দিতে হবে। বর্তমানে দেশে ১ কোটি ১৫ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) রয়েছেন। যাদের করযোগ্য আয় আছে, তাদের রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সময় হাতে আছে মাত্র ১০ দিনের মতো। অনলাইনে রিটার্ন দিতে হবে বলে সাপ্তাহিক ছুটি বা বিশেষ ছুটির দিনেও ঘরে বসে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। রিটার্ন জমার শেষ দু-এক দিন আগে তাড়াহুড়া না করাই ভালো। এতে নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়।
ভুলের ঝুঁকি বাড়ে: তাড়াহুড়ায় আয়-ব্যয়, করছাড় ও উৎসে করের হিসাব গড়মিল হতে পারে। সময় নিয়ে হিসাব করলে ভুলের আশঙ্কা কমে।
কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকে: শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সনদ ও রসিদ যাচাইয়ের সময় পাওয়া যায় না। এখনো সময় আছে। দরকারি কাগজপত্র আগে থেকেই গুছিয়ে রাখা ভালো।
অনলাইন পোর্টালে চাপ পড়ে: শেষ দু-তিন দিন রিটার্ন জমার সিস্টেমে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এতে লগইন বা সাবমিটে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জরিমানা ও জটিলতা বাড়ে: নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে জরিমানা বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়ায় পড়ার ঝুঁকি থাকে।
কর পরিকল্পনার সুযোগ নষ্ট হয়: আগেভাগে রিটার্ন দিলে বৈধ করছাড় ও সমন্বয়ের সুবিধা হিসাব করে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।
সংশোধনে ভোগান্তি হয়: ভুল হলে রিটার্ন সংশোধনে বাড়তি সময় ও দপ্তরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শেষ মুহূর্তে এসব ভুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মানসিক চাপ বাড়ে: শেষ সময়ের দৌড়ঝাঁপ অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ ও চাপ তৈরি করে।
অনলাইনে রিটার্ন দেবেন যেভাবে:
সব করদাতাকে নির্ধারিত অনলাইন আয়কর পোর্টালে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে। প্রথমে সেখানে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে রিটার্ন দাখিল করা যাবে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন বা ই-রিটার্ন দিতে কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে হয় না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তথ্য দিলেই যথেষ্ট। তবে যেসব কাগজের তথ্য দেওয়া হবে, সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। ভবিষ্যতে নিরীক্ষা বা অন্য প্রয়োজনে এসব কাগজপত্র চাইতে পারে।
অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার সময়ই ঘরে বসে কর পরিশোধ করা যাবে। ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে।
যেসব কাগজপত্রের তথ্য লাগবে:
রিটার্ন জমার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তথ্য জোগাড় করে রাখা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে— বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকর রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের ক্রয় বা বিক্রয় চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশের ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট এবং সুদের ওপর উৎসে কর কর্তনের সার্টিফিকেট।
বিনিয়োগের মাধ্যমে কর রেয়াত নিতে চাইলে আরও কিছু কাগজের তথ্য প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে আছে জীবনবিমার প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে জমা দেওয়া চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমের চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ এবং জাকাত তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ। সব মিলিয়ে হাতে থাকা সময়টুকু কাজে লাগিয়ে এখনই রিটার্ন জমার প্রস্তুতি নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

