উচ্চ সুদ হার, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি এবং চলমান আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে এবার ভোক্তা ঋণেও বড় ধস পড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আগের তিন মাসের তুলনায় ব্যাংক খাতে ভোক্তা ঋণ কমেছে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতদিন ব্যবসা-বাণিজ্য, নির্মাণ ও পরিবহনসহ প্রায় সব উৎপাদনমুখী খাতে ব্যাংক ঋণের স্থিতি কমলেও ভোক্তা ঋণ তুলনামূলকভাবে বাড়ছিল। তবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে ভোক্তা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার ৩৪০ কোটি টাকায়। এটি মোট ব্যাংক ঋণের ৮.৬৩ শতাংশ। অথচ জুন শেষে ভোক্তা ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৭২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংক ঋণের ৯.৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে ভোক্তা খাতে ব্যাংক ঋণ কমেছে ২২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।
এর আগে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এ খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বেড়েছিল। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভোক্তা ঋণের স্থিতি ছিল এক লাখ ৪৭ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও অর্থনৈতিক সংকট কমেনি। তার ওপর ঋণে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিলাসী ও অভিজাত পণ্য কেনাকাটা কমাচ্ছেন। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভোক্তা ঋণের ওপর।
ভোক্তা ঋণ সাধারণত মানুষ নেন অভিজাত পণ্য, বিলাসবহুল সেবা ও ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে। এর মধ্যে রয়েছে দৈনন্দিন ব্যয়, সামাজিক অনুষ্ঠান, জমি বা বাড়ি কেনা, গাড়ি ক্রয়, বড় আয়োজন, ভ্রমণসহ নানা খাত। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণও এর অন্তর্ভুক্ত। ব্যাংকগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ, ভ্রমণ, পেশাজীবী ঋণ, পরিবহন ঋণ, প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিপরীতে ঋণ, ডিপোজিট প্রিমিয়াম স্কিম (ডিপিএস) ও ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্টের (এফডিআর) বিপরীতে ব্যক্তিগত ঋণসহ বিভিন্ন খাতে ভোক্তা ঋণ দিয়ে থাকে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত ঋণ, ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত গাড়ি ঋণ এবং দুই কোটি টাকা পর্যন্ত আবাসন ঋণ নিতে পারেন। এসব ঋণের সুদহার বর্তমানে ১১ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে থাকলেও ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পেশাজীবী ঋণ কমেছে ১৬৪ কোটি টাকা। একই সময়ে ফ্ল্যাট কেনায় ঋণ কমেছে ৬৫০ কোটি টাকা, পরিবহন ঋণ ৮৯২ কোটি টাকা, টিভি, ফ্রিজ ও কম্পিউটার ক্রয়ে ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা এবং ক্রেডিট কার্ডে ঋণ কমেছে ৩৮২ কোটি টাকা। এছাড়া বিবাহ ঋণ তিন কোটি টাকা, জমি ক্রয়ে ঋণ ১৮১ কোটি টাকা এবং বেতনের বিপরীতে নেওয়া ঋণ কমেছে এক হাজার ৯১৭ কোটি টাকা।

