সরকার দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি খাতকে টেকসই ও লাভজনক করার জন্য ২৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চার বছরব্যাপী এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য চার জেলায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো এবং কৃষিকে আরও লাভজনক পেশায় রূপান্তর করা।
বগুড়া অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন:
‘বগুড়া কৃষি অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন’ নামের এই প্রকল্প ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়িত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব নেবে এবং পুরো ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। প্রকল্পের কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনা, পানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন।
ডিএই মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, “যমুনা-করতোয়া-পদ্মা-বাঙ্গালীবিধৌত বগুড়া অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমছে, বৃষ্টিপাত কমছে, তাপমাত্রা বাড়ছে। বন্যা, নদীভাঙন ও অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে আবাদি জমিও কমছে। অপর দিকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।”
প্রকল্পের লক্ষ্য ও কার্যক্রম:
ডিএই-এর নথিপত্র অনুযায়ী, আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন ৫ শতাংশ বাড়ানো হবে এবং শস্য নিবিড়তা ২৩৬ শতাংশ থেকে ২৪১ শতাংশে উন্নীত হবে। এক হাজার নতুন দক্ষ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে এবং ৩৫ হাজার কৃষি মানবসম্পদকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোও প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
- বগুড়ায় উপপরিচালকের কার্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ
- ২০০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার
- তিনটি আধুনিক ফল, সবজি ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন
- ৩ হাজার ১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ
- কৃষকদের জন্য ৪ হাজার ৮৪০ ব্যাচ প্রশিক্ষণ আয়োজন
- ৪১ হাজারের বেশি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী
- ৭০০টি মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা
পরিকল্পনাসচিব এস এম শাকিল আখতার বলেন, “প্রকল্পটি টেকসই কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় কি না, সেটিই প্রকল্পের সাফল্য নির্ধারণ করবে।”
কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, “পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার আবাদি জমির সঠিক ফসল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষকের ক্ষতি কমবে এবং আয়ের সুযোগ বাড়বে।”

