ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজ একীভূত করে সরকার যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনা করছে, তা নিয়ে এবার তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্ররা।
তারা দাবি করেছেন, প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোকে ‘হাইব্রিড কাঠামো’ বা কোনো অপ্রচলিত শিক্ষাকাঠামোর পরীক্ষামূলক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। দেশের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং স্বাতন্ত্র্য সর্বোচ্চভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্ররা সরকারকে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন এবং চার দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন হবে। এরপরও প্রভাবশালী পদক্ষেপ না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই আপত্তি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী।
২০১৭ সালে সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা আসে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে।
সাতটি সরকারি কলেজ হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ এবং তিতুমীর কলেজ। সরকার নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে যাচ্ছে, যার নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র (একাডেমিক ক্যাম্পাস) হিসেবে কাজ করবে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে আলাদা বিষয় পড়ানো হবে, বিষয়ও কমানো হবে। এই প্রস্তাবিত কাঠামো নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এবং আন্দোলন শুরু করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ১৮৫ বছরের পুরনো ঢাকা কলেজের ইতিহাস ও স্বাতন্ত্র্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ অংশীজনদের হতাশ করেছে। সংকীর্ণ স্বার্থে প্রণীত খসড়া অধ্যাদেশ সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতো প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও আহত ও ক্ষুব্ধ করেছে।
১০ দফা দাবি:
১. ঢাকার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ করা হবে;
২. কলেজের অবকাঠামো ও জমি অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে লিখিত হবে না;
৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা বাণিজ্যিক স্বার্থে শিক্ষাকাঠামো সংকুচিত করা যাবে না;
৪. নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে পারবে;
৫. উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হবে;
৬. পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করা, পরীক্ষা নেওয়া ও ফলাফল প্রকাশ দ্রুত করা হবে;
৭. শিক্ষকসংখ্যা বৃদ্ধি করে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যৌক্তিক করা হবে; নতুন বিভাগ খোলা হবে;
৮. শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি, আবাসন, খাবারে ভর্তুকি, শিক্ষাঋণ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে;
৯. শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে;
১০. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হাইব্রিড বা পরীক্ষামূলক কাঠামোর উপকরণে পরিণত করা যাবে না এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত করা যাবে না।
লিখিত বক্তব্যে রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন ও সমাজের সহযোগিতা কামনা করা হয়। ঢাকা কলেজ প্রাক্তনরা আশা প্রকাশ করেছেন, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়টি মেনে নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর নেওয়াজ আলী, হারুনুর রশিদ হারুন, সাবেক জিএস জাকির হোসেন, সাবেক জিএস এস এ এইচ এম জাভেদ সহ অন্যান্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

