ডিজিটাল যুগে বইয়ের পাতা যেন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে স্ক্রিনের আলোয়। তবে একেবারে যে মানুষ বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে—তা নয়। বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও বইপড়ার অভ্যাস টিকে আছে বেশ দৃঢ়ভাবে। সম্প্রতি সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের এক বৈশ্বিক জরিপ, যেখানে ১০২টি দেশের মানুষের বই পড়ার অভ্যাস নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে মানুষ প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৭ ঘণ্টা সময় বই পড়ায় ব্যয় করেন—অর্থাৎ বছরে প্রায় ৩৫৭ ঘণ্টা। তাদের ঠিক পরেই আছে ভারত, বছরে গড়ে ৩৫২ ঘণ্টা বই পড়ার পেছনে ব্যয় করে ভারতীয়রা। তৃতীয় স্থানে যুক্তরাজ্য, যেখানে গড় সময় ৩৪৩ ঘণ্টা। এরপরের স্থানে ফ্রান্স (৩০৫ ঘণ্টা) এবং ইতালি (২৭৮ ঘণ্টা)।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার ৯৭তম—যা বললে লজ্জারই। জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের একজন মানুষ বছরে গড়ে মাত্র ২.৭৫টি বই পড়েন। সময়ের হিসাবে এটি বছরে মাত্র ৬২ ঘণ্টা। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি সপ্তাহে একজন বাংলাদেশি বই হাতে নিচ্ছেন এক ঘণ্টারও কম সময়ের জন্য।
বিশ্বের নানা দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ও গেমিং সংস্কৃতি যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, অনেক দেশেই এখনও বইকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে জ্ঞান ও চিন্তার চর্চা। জরিপ অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই মানুষ বইপড়াকে এখনও সময়ের অন্যতম সেরা বিনিয়োগ মনে করে।
যেমন—কানাডা (২৩২ ঘণ্টা), রাশিয়া (২২৩ ঘণ্টা), অস্ট্রেলিয়া (২১৭ ঘণ্টা) এবং স্পেন (১৮৭ ঘণ্টা)-এর মতো দেশগুলোও আছে শীর্ষ ১০-এ। এমনকি ছোট দেশ নেদারল্যান্ডসও (১৮২ ঘণ্টা) জায়গা করে নিয়েছে সেরা দশে।
তালিকার শেষের দিকে দেখা যাচ্ছে মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেই। বাংলাদেশ (৬২ ঘণ্টা), পাকিস্তান (৬০ ঘণ্টা), সৌদি আরব (৬০ ঘণ্টা) এবং আফগানিস্তান (৫৮ ঘণ্টা)—সবাই অবস্থান করছে একেবারে নিচের দিকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শহুরে জীবনের ব্যস্ততা, বিনোদনের বিকল্প মাধ্যমের বিস্তার এবং শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ বইপড়ার সংস্কৃতিকে ধীরে ধীরে সংকুচিত করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বই পড়া কেবল জ্ঞানার্জনের উপায় নয়, বরং একটি জাতির চিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি। তাই তরুণ প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতে পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজ—তিন স্তরেই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
ডিজিটাল বই বা ই-বুক এখন সহজলভ্য, তবু প্রিন্ট বইয়ের স্বাদ আর ঘ্রাণের বিকল্প নেই। তাই হয়তো সময় এসেছে স্ক্রিন থেকে কিছুটা সরে এসে কাগজে মুদ্রিত সেই পুরনো শব্দগুলোর কাছে ফিরে যাওয়ার।

