কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের লার্নিং সেন্টার (শিক্ষাকেন্দ্র) পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ডাক্তার মোস্তফা-হাজেরা (ডিএমএইচ) ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি সংস্থাটি ৮০০ রোহিঙ্গা রোগীকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দিয়েছে।
গতকাল বুধবার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফটোসাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, হেলথ সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক পরিচালক সুলতানা খানম প্রমুখ।
এ কে এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, “ডিএমএইচ ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে কাজ করছে। এই লক্ষ্যেই আমরা ‘গ্লোবাল ফাইভ জিরো ক্যাম্পেইন’ হাতে নিয়েছি। এর উদ্দেশ্য হলো নিপীড়ন, অবহেলা ও মানবাধিকারের বাধা শূন্যে নামানো।”
তিনি আরো বলেন, “কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা অমানবিক জীবন যাপন করছে। তহবিলসংকটে শত শত শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের সময় নষ্ট হচ্ছে এবং তারা সন্ত্রাস বা মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা স্থানীয় রোহিঙ্গা শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নিয়েছি।”
ফটোসাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম বলেন, “শিশুরা এমন এক ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে, যেখানে অন্য কোনো পৃথিবী তারা চেনে না। বৃদ্ধরা দিন কাটাচ্ছেন রাখাইনের পোড়া গ্রামের স্মৃতিতে। যুবকরা সম্ভাবনা নিয়ে আটকে আছেন হতাশা ও নির্ভরতার চক্রে। এটি শুধু মানবিক নয়, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও নৈতিকতারও সংকট।”
শুলতানা খানম যোগ করেন, “বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা। নীরব থাকা মানে আমরা অমানবিকতাকে মেনে নিচ্ছি। নীরবতাই মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপরাধ। মানবাধিকারের পক্ষে প্রতিটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিবন্ধিত, যার মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। গত দেড় বছরে নতুন করে আরও ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তহবিলসংকটে আশ্রয়শিবিরের বেশির ভাগ শিক্ষাকেন্দ্রই বন্ধ রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে এক দিন অনুষ্ঠিত হয়, ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ক্লাস পাঁচ দিন চলে। বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্র চালুর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
৮০০ রোহিঙ্গা রোগীকে স্বাস্থ্যসেবা-
ডিএমএইচ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে ৮০০ রোহিঙ্গা রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়। এতে ৪ জন চিকিৎসক ও ১৬ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল অংশ নেয়।
সেবা নেওয়া রোগীর মধ্যে ১২০ শিশু ও ২০০ চর্মরোগী ছিলেন। এছাড়া ছিলেন ডায়াবেটিস ১০০ জন, উচ্চ রক্তচাপ ১০০ জন, স্ত্রীরোগ ৫০ জন, অর্থোপেডিক ৫০ জন, নাক-কান-গলা ৫০ জন, কিডনি ও ইউরোলজি ৩০ জন, চোখ ২০ জন, লিভার ও গ্যাস্ট্রিক ৩০ জন, সাধারণ রোগী ৫০ জন।

