ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রিয় মুখ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক—দর্শকের কাছে যিনি চিরকালীন ‘মিয়া ভাই’। পর্দায় তিনি কখনো প্রতিবাদী যুবক, কখনো নিঃশব্দ প্রেমিক, আবার কখনো সাদামাটা কৃষক। অভিনয়ের সহজাত ভঙ্গি, চোখের ভাষা আর চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার ক্ষমতায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন রুপালি পর্দার এক বাস্তবতা। আজ ১৮ আগস্ট তাঁর জন্মদিনে ভক্তরা স্মরণ করছেন এই কিংবদন্তি অভিনেতাকে।
ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি সিনেমায়। তবে আলোচনায় আসেন খান আতাউর রহমানের সুজন সখী (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে সুজন চরিত্রে অভিনয় করে। এরপর নয়নমনি–তে নয়ন, সারেং বউ–তে কদম সারেং, গোলাপী এখন ট্রেনে–তে মিলন—প্রতিটি চরিত্র তাঁকে এনে দেয় ভিন্ন উচ্চতা।

সত্তর ও আশির দশকে গ্রামীণ পটভূমির সিনেমার অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। পরিচালকরা জানতেন, গ্রামীণ আবেগ, প্রতিবাদী সুর আর সরল প্রেমের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে ‘ফারুক’-এর মতো আর কেউ নেই।
চলচ্চিত্র শিক্ষক মতিন রহমানের ভাষায়, “ফারুক গ্রামীণ মানুষের স্বভাবগত জিদ, তাড়না ও প্রতিবাদের ভাষা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। তাঁর সহজাত অভিনয়শৈলী অন্য শিল্পীদের মধ্যে দেখা যায়নি বলেই তিনি দর্শকের কাছে ‘মিয়া ভাই’ হয়ে উঠেছিলেন।”
আশির দশকের শেষভাগে সিনেমায় শহুরে গল্প বাড়তে থাকে, কমতে থাকে গ্রামীণ পটভূমি। মতিন রহমানের মতে, “আমরা গ্ল্যামার ও চাকচিক্য খুঁজতে গিয়ে গ্রামকে হারিয়ে ফেলেছি। তাই নতুন করে আর কোনো গ্রামীণ নায়ক তৈরি হয়নি।”

ফারুকের জন্ম মানিকগঞ্জের ঘিওরে হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। স্থানীয় শিল্পী ও নির্মাতাদের আড্ডায় মিশে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ভাষা, ভঙ্গি আত্মস্থ করেন তিনি, যা পর্দায় নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ফারুক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ২০১৬ সালে আজীবন সম্মাননা পান। লাঠিয়াল (১৯৭৫) চলচ্চিত্রের জন্য পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কারও। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং সক্রিয় রাজনীতিকও।
প্রায় পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে গ্রামীণ চরিত্রকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন ফারুক। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি এক এবং অদ্বিতীয়।