ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হওয়ার কথা। এর আগেই দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে নির্বাচনি জোটের চিত্র ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি পার্টি) কয়েকটি দল নতুন জোট গঠনের পথে। সূত্রের খবর, আরও কয়েকটি দল যুক্ত হতে পারে। সবমিলিয়ে, তফশিল ঘোষণার আগেই নতুন জোটের রূপরেখা ধরা দিয়েছে।
সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট প্রথম আলোচনা হয়েছিল, বড় দল বিএনপি জামায়াতে ইসলামীকে কিছু আসন ছাড় দিতে পারে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে; এখন বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জামায়াত। এই বাস্তবতায়, বিএনপি শুধুমাত্র তার চলমান আন্দোলনের অংশীদারদের সঙ্গে নয়, বাম-ডান, মধ্যম ও ইসলামপন্থি বিভিন্ন দলকে যুক্ত করে একটি ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপরপক্ষে, জামায়াতও সাতটি ইসলামি দল নিয়ে নির্বাচনি সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। বাম ঘরানার কয়েকটি দলও নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনায় কাজ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এবারের নির্বাচন জোটভিত্তিক হতে পারে। ছোট দলগুলোর ভোটই অনেক প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। তাই আসন্ন নির্বাচনে জোটের সমীকরণ এবং আসন ভাগাভাগি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বে একটি বৃহৎ জোট গঠনের কাজ চলছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদাররা এবং হাসিনা সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “যেসব গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দল নির্বাচনি জোটে আসতে চাইবে, তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
তরুণদের দল এনসিপি ও এবি পার্টি নিয়েও তফশিলের আগে জোট গঠনের সম্ভাবনা তোলপাড় করছে। এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে কিছু বৈঠক ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। এদিকে গণ-অভ্যুত্থানে সমর্থনকারী অন্যান্য দলগুলোকেও জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছে বিএনপি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ আলেম ও তাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাও চলছে, যাতে সমন্বিত প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী হয়।
অন্যদিকে জামায়াতের কৌশলও আলাদা। গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথমে এনসিপির সঙ্গে কিছু মিল দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত তারা আলাদা পথ বেছে নিল। জামায়াত সাতটি ইসলামি দল নিয়ে একটি নির্বাচনি সমঝোতায় এগোচ্ছে। দলগুলো ‘এক আসনে এক প্রার্থী’ নীতিতে কাজ করছে এবং আসনভিত্তিক জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা কোনো জোটের ঘোষণা দিচ্ছি না, তবে নির্বাচনি সমঝোতা হবে। শুধু ইসলামি দল নয়, দেশপ্রেমিক যারা আছেন, তারা যুক্ত হচ্ছেন।”
এবি পার্টি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আপ বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দল নিয়ে নতুন জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে ২৭ নভেম্বর এই জোট ঘোষণার কথা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, এবার নির্বাচনে বড় দলগুলো তাদের প্রতীক বহন করবে, তাই শরিক দলগুলোর আসন ছাড় এবং জোট গঠন বিষয়ে সময় নেওয়া প্রয়োজন।
সংক্ষেপে, ভোট যত ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনি জোটের ছবি ততই স্পষ্ট হচ্ছে। বড় ও ছোট দল, বাম থেকে ইসলামপন্থি, নানা দিকের দলগুলো ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এবারের নির্বাচন জোটের সমীকরণেই নির্ধারিত হতে পারে বিজয়ী এবং হেরে যাওয়া প্রার্থীর চূড়ান্ত ভাগ্য।

