গরমের দিনে এসি ছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখা কঠিন মনে হতে পারে, তবে এমন কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে যা আপনাকে এসি ছাড়াই ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখতে পারবেন এবং পরিবেশের ক্ষতিরও হাত থেকে রক্ষা পাবেন। চলুন, জেনে নেয়া যাক গরমে এসি ছাড়াই ঘর ঠান্ডা রাখার অসাধারণ টিপস:
১. জানালা কখন খুলবেন, কখন বন্ধ রাখবেন?
গরমের সময়ে সূর্যের তাপ ঘরে ঢোকানোর প্রধান উৎস। দিনের বেলায় জানালা বন্ধ রাখা উচিত, বিশেষ করে পশ্চিম এবং উত্তরমুখী জানালা। এছাড়া জানালাগুলোতে হালকা রঙের মোটা সুতির পর্দা লাগিয়ে ঘর অন্ধকার করে রাখলে তাপ শোষণ কম হবে। পর্দার বাইরের দিকে সাদা কাপড় বা সাদা পর্দা দিলে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হবে এবং ঘর ঠান্ডা থাকবে।
২. জানালা, দেয়াল ও ছাদে প্রলেপ:
হিট প্রোটেক্টিভ উইন্ডো ফিল্ম লাগানোর মাধ্যমে জানালার কাঁচের উপর ৭৮% সৌর তাপ এবং ৯৯% ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি আটকানো সম্ভব। এছাড়া, দুটি স্তরবিশিষ্ট কাঁচের জানালা তাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি কার্যকর। দেয়াল এবং ছাদে ইনসুলেশন করলে ঘরের তাপমাত্রা আরও নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যা শীতকালেও সহায়ক।
৩. ছাউনি:
জানালায় সানশেড থাকলে রোদের তাপ অনেকটাই আটকানো যায়। সানশেড না থাকলে হালকা রঙের ছাউনি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ৭৭% সূর্যের তাপকে প্রতিফলিত করতে সহায়তা করবে। এতে ঘরের তাপমাত্রা কম থাকবে।
৪. দেয়াল, মেঝে, আসবাবপত্রের রঙ:
ঘরের দেয়াল, মেঝে এবং আসবাবপত্রের রঙ হালকা রাখলে বেশি আলো প্রতিফলিত হয় এবং তাপমাত্রা বাড়ে না। ঘরের তাপমাত্রা কম রাখতে তাপনিরোধী পেইন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া মেঝে ঠান্ডা রাখার জন্য মার্বেল, স্যান্ডস্টোন, বা গ্রানাইটের টাইলস খুবই কার্যকর। তবে এগুলোর পরিবর্তে সাদা রঙের সিরামিক বা ভিনাইল টাইলসও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. ছাদ:
গাঢ় রঙের ছাদ ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। কিন্তু সাদা রঙের ছাদ সূর্যের বেশিরভাগ আলো প্রতিফলিত করে, ফলে ঘর ঠান্ডা থাকে। সাদা রঙ করা ছাদ ৮৫% সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে পারে, যা ঘরকে ঠান্ডা রাখে। এছাড়া, ছাদে বাগান বা ঘাস বিছিয়ে দেয়া হলে পরিবেশ আরও শীতল হবে।
৬. সিলিং ফ্যান:
ফ্যানের পাখাগুলো ঠিকভাবে ঘুরছে কি না তা পরীক্ষা করুন। ফ্যান যদি ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরে, তবে গরম বাতাস বের করে এবং ঘর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। সিলিং ফ্যান সবসময় পরিষ্কার রাখুন যাতে এর কাজ আরও ভালো হয়।
৭. ঠান্ডা বাতাস:
ফ্যানের নীচে বড় একটি প্লেটের উপর বরফ রেখে, তার উপরে ফ্যান চালালে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হবে। বরফ না থাকলে ঠান্ডা পানির বালতি ফ্যানের নীচে রাখলেও কার্যকরী হবে। এছাড়া, ঘর মুছে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো গেলে ঘর অনেক ঠান্ডা থাকে।
৮. এক্সস্ট ফ্যান:
এক্সস্ট ফ্যান ঘরের ভিতরের তাপ বাইরে বের করে এবং বাইরের ঠান্ডা বাতাস ভেতরে আনতে সহায়তা করে। রান্নাঘর বা টয়লেটের মতো জায়গায় এক্সস্ট ফ্যান খুব কার্যকরী, বিশেষ করে যখন ঘরের ভিতরের তাপ বাইরের থেকে বেশি হয়।
৯. বিছানা তোশক বালিশ:
গরমের সময়ে ১০০% পাতলা সুতির কাপড়ের বিছানা, তোষক, ও বালিশ ব্যবহার করুন, কারণ সিল্ক বা পলেস্টারের মতো কাপড় তাপ শোষণ করে। এছাড়া সাদা রঙের বিছানার চাদর ব্যবহার করলে তাপ শোষণ কম হয়।
১০. বাতি পরিবর্তন:
এলইডি লাইট ব্যবহারের ফলে ঘরে তাপ কম উৎপন্ন হয়। তাই, তাপ উৎপন্নকারী পুরোনো ধরনের বাতি পরিবর্তন করে এলইডি লাইট ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া, অপ্রয়োজনে বাতি বন্ধ রাখুন।
১১. রান্না:
গরমকালে রান্না করার সময় যতটা সম্ভব কম তাপ উৎপন্ন করা যায়, সেই ধরনের খাবার রান্না করুন। যেমন, মাইক্রোওয়েভে রান্না করা যায় এমন খাবার ব্যবহার করুন, যাতে চুলা বা ওভেন কম সময় ব্যবহার হয় এবং তাপ কম ছড়ায়।
১২. বৈদ্যুতিক যন্ত্র:
যন্ত্র ব্যবহার শেষে প্লাগের সংযোগ খুলে রাখুন, কারণ প্লাগ ইন করলে তা তাপ উৎপন্ন করতে পারে। বৈদ্যুতিক ডিভাইস কম ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ খরচ কমে এবং ঘরও ঠান্ডা থাকে।
১৩. শরীর ঠান্ডা রাখা:
গরমের সময়ে শরীর ঠান্ডা রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই বেশি পানি পান করুন, সুতির পোশাক পরুন, ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন এবং প্রয়োজনে গায়ে পানি ছিটিয়ে ফ্যানের বাতাসে শরীর ঠান্ডা করতে পারেন।
এই ১৩টি উপায় অনুসরণ করলে, আপনার ঘর এসি ছাড়াই অনেক ঠান্ডা থাকবে, বিদ্যুৎ বিলও কমে যাবে।