বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের অবস্থা অবনতির দিকে। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২৫ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স পরিচালিত এ গবেষণায় বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৯৪টি দেশে গণতান্ত্রিক সূচকের অন্তত একটি করে অবনতি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মতো মৌলিক গণতান্ত্রিক উপাদানগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে অনেক দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে।
সংস্থার মহাসচিব কেভিন কাসাস-জামোরা বলেন, “বিশ্বের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন আয়োজনের বিশ্বাসযোগ্যতা, বিচারব্যবস্থায় নাগরিক অংশগ্রহণ ও কার্যকর সংসদের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে।

অঞ্চলভিত্তিক অবনতি-
সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে (৩৩ শতাংশ)। ইউরোপে এই হার ২৫ শতাংশ। পশ্চিম এশিয়াতেও পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে।
ইতিবাচক দিক-
তবে কিছু দেশে উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আফ্রিকার বতসোয়ানা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সাম্প্রতিক নির্বাচন ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ইউরোপে ডেনমার্ক চারটি সূচকে (প্রতিনিধিত্ব, আইনের শাসন, অংশগ্রহণ ও অধিকার) শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়া জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, চিলি, কোস্টারিকা ও অস্ট্রেলিয়াও অগ্রগতি দেখিয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ৫০ বছরে সর্বনিম্ন-
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিশ্বজুড়ে গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবনমন ঘটেছে। মোট ৪৩টি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার ১৫টি এবং ইউরোপের ১৫টি দেশ।
আফগানিস্তান, মিয়ানমার, বুরকিনা ফাসো ও দক্ষিণ কোরিয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবনতিতে শীর্ষে রয়েছে। কেভিন কাসাস-জামোরা এর জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ, মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি ও ভ্রান্ত তথ্য ছড়ানোকে দায়ী করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান-
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধিত্ব সূচকে অবস্থান ৩৫ এবং অধিকারের ক্ষেত্রে ৩২। তবে ‘অংশগ্রহণ’ সূচকে দেশটি ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগের তথ্য বিশ্লেষণ করা হলেও তার সরকারের কিছু পদক্ষেপও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
কেভিন কাসাস-জামোরা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের শেষের নির্বাচন এবং ২০২৫ সালের প্রথম দিকের ঘটনাপ্রবাহ হতাশাজনক।”