ক্রিকেট মানেই এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি জগতে কোটি কোটি টাকার খেলা, বড় বড় তারকাদের উপস্থিতি, আর উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ। মাঠে যতটা লড়াই, মাঠের বাইরেও ঠিক ততটাই ব্যবসা, পরিকল্পনা আর আয়োজন। আইপিএল, পিএসএল, বিগ ব্যাশ—এগুলো শুধু ক্রিকেট লিগ নয়, আলাদা একটা উৎসব হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় বাংলাদেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বিপিএল এখন কোথায়?
সম্প্রতি বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে তারা বিশ্বের শীর্ষ সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের নাম উল্লেখ করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে আইপিএল, পিএসএল, আইএলটি২০, দ্য হান্ড্রেড, সিপিএল, এসএ২০ এবং বিগ ব্যাশ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বিপিএলের নাম সেখানে নেই। অথচ এই লিগ শুরু হয়েছিল এক যুগ আগেই—২০১২ সালে।
তালিকায় কেন নেই বিপিএল?
বিবিসির এই বিশ্লেষণে সহায়তা করেছে ক্রিকেট পরিসংখ্যানভিত্তিক সংস্থা ক্রিকভিজ। তারা বেশ কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই লিগগুলোকে মূল্যায়ন করেছে—যেমন:
-
প্রতি ম্যাচে গড় চার-ছক্কা
-
শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচের টান টান উত্তেজনা
-
ডট বলের হার
-
বোলারদের কার্যকারিতা
-
ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ
-
এবং সবশেষে, দর্শক আকর্ষণ ও টুর্নামেন্টের বিনোদন মূল্য
এই প্রতিটি জায়গাতেই অন্য লিগগুলো যেখানে ভালো করছে, বিপিএল সেখানে পড়েছে পিছিয়ে।
বিপিএলের দুর্দশার কারণগুলো কী?
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিপিএলের বর্তমান অবস্থার পেছনে কিছু নির্দিষ্ট দুর্বলতা কাজ করছে:
-
আন্তর্জাতিক তারকা খেলোয়াড়দের না থাকা
-
পেশাদার ব্যবস্থাপনার অভাব
-
বাজেট সংকট ও স্পন্সরদের অনাগ্রহ
-
নির্দিষ্ট সূচির অভাব, হঠাৎ পরিবর্তন
-
প্লেয়ার ড্রাফট ঘিরে অনিশ্চয়তা ও বিলম্ব
-
সময়মতো পারিশ্রমিক না পাওয়া
-
প্রযুক্তিগত ঘাটতি ও দুর্বল সম্প্রচার
এদিকে, আইপিএল বা পিএসএলের দিকে তাকালে দেখা যায়—প্রতিটি ম্যাচ যেন একেকটা বিশাল প্রোডাকশন। গ্যালারি ভর্তি দর্শক, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, সুপরিকল্পিত ব্রডকাস্ট। আর বিপিএলে? অনেক সময়ই স্টেডিয়াম ফাঁকা, সম্প্রচার মানে ইউটিউব কোয়ালিটির চেয়েও খারাপ, আর এক মৌসুম শেষ না হতেই পরেরটির ভবিষ্যৎ পড়ে থাকে ঘোলাটে ধোঁয়াশায়।
তবে কি বিপিএলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার?
তা কিন্তু নয়। এই লিগের এখনো অনেক সম্ভাবনা আছে—বিশেষ করে বাংলাদেশের বিশাল ক্রিকেটপ্রেমী জনগোষ্ঠী এখনো বিপিএলকে ভালোবাসে, অনুসরণ করে। শুধু দরকার কিছু সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ:
-
আন্তর্জাতিক মানের সম্প্রচার ও ব্র্যান্ডিং
-
বড় স্পন্সরদের আকৃষ্ট করা
-
সময়মতো খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক প্রদান
-
নির্ধারিত সময়সূচি অনুসরণ
-
বিসিবির পক্ষ থেকে পেশাদার মনোভাব ও স্বচ্ছ দিকনির্দেশনা
বিপিএল একসময় যে উচ্চতায় ছিল, সেখানে আবার ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব—শুধু দরকার সঠিক পরিকল্পনা, আগ্রহ আর নেতৃত্ব।বিপিএল কি শুধুই একটা টুর্নামেন্ট? না, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি। সেটাই যদি হারিয়ে যায়, তাহলে ক্রিকেটপ্রেমী জাতি হিসেবে আমাদের হারাতে হবে অনেক কিছু। এখন সময়, প্রশ্নটা তোলার—এই দায় কে নেবে? ঘুরে দাঁড়ানোর কাজটা কে শুরু করবে?

