ইমরানুর রহমান। দীর্ঘ বিরতির পর আবার ট্র্যাকে ফিরেই নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করলেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী এই স্প্রিন্টার। ২২ আগস্ট জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সামার অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের দ্রুততম মানুষের খেতাব ফিরে পেলেন তিনি। ৩২ বছর বয়সী এই তারকা ১০০ মিটারে পাঁচবার অংশ নিয়ে সববার সেরা হয়েছেন। দেশের অ্যাথলেটিক্সের প্রাণ ভোমরাকে নিয়ে লিখেছেন আশিক মুস্তাফা।
চোটে আট মাস মাঠের বাইরে থাকার পর ইমরানুর ফেব্রুয়ারিতে ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে দেশসেরা হওয়ার খেতাব হারান। দীর্ঘ সময়ের কঠিন পরিস্থিতি পার করে ট্র্যাকে ফিরে এসে তিনি আবার নিজের সামর্থ্য দেখালেন। জাতীয় স্টেডিয়ামে বিজয়ী হওয়ার পর ইমরানুর বলেন, “এটি ছিল আমার ফিরে আসার দৌড়। আমি শুধু চেয়েছি দৌড়টা ঠিকভাবে শেষ করতে। টাইমিং বা জয় নিয়ে খুব ভাবিনি। আজ নৌবাহিনীর জন্য জিতেছি। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে এবং আমার ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়েছে।”
২২ আগস্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ইমরানুর সহজে সেরা হন। তিনি দৌড় শেষ করেন ১০.৬৪ সেকেন্ডে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আব্দুল মোতালেব ১০.৮৬ সেকেন্ডে দ্বিতীয় হন। তৃতীয় হন ইসমাইল হোসেন ১০.৮৮ সেকেন্ডে। ইমরানুর অনুপস্থিতিতে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে ১০০ মিটারে ইসমাইল সেরা হয়েছিলেন। গত বছর ইমরানুর ১০.৩৬ সেকেন্ডে বিজয়ী হয়েছিলেন। এর আগে ১০.৪৯ ও ১০.৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেছিলেন তিনি। ২০২২ সালের সামার অ্যাথলেটিক্সে তার সেরা সময় ছিল ১০.২৯ সেকেন্ড।
ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ইমরানুর ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রেমে ছিলেন। ওয়েন রুনি ও ডেভিড বেকহামের মতো তারকা হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটবলের স্বপ্ন ছোট হয়ে আসে। এরপর ১৯ বছর বয়সে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে হাত দেন। লন্ডনের একটি ক্লাবের মাধ্যমে অ্যাথলেটিক্সের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়। তিনি বলেন, “মূলত সেই ক্লাব থেকেই স্প্রিন্টের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। এরপর এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিই।”
ইমরানুর বলেন, “বাংলাদেশে আমার মা-বাবা জন্মগ্রহণ করেছেন। দেশের প্রতি টান সেই কারণেই। ইংল্যান্ডের বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকেও সমর্থন পাই। কিন্তু শিকড়ের টান আমাকে বাংলাদেশে ফিরিয়েছে।” বাংলাদেশের ঘরোয়া অ্যাথলেটিকসে ফিরে তিনি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন। ২০২২ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সেরা অ্যাথলেটিক সাফল্য আনে।
সোনার পদক পরার সময় জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাজার অনুভূতি স্মরণ করে তিনি বলেন, “সেটি অবিশ্বাস্য। বিদেশের মাটিতে লাল-সবুজ পতাকা উড়েছে। জাতীয় সংগীত শোনার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যাই।”
২০২৩ সালে থাইল্যান্ডে এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেমিফাইনালে ওঠেন। প্রথম রাউন্ডে ১০.২৫ সেকেন্ডে দৌড়ান। আগস্টে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপেও প্রথম রাউন্ডে হিটে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব দেখান। সেপ্টেম্বরে লন্ডনের এক প্রতিযোগিতায় দৌড়ান ১০.১১ সেকেন্ডে, যা তার ব্যক্তিগত সেরা।
ইমরানুর দীর্ঘ অসুস্থতা কাটিয়ে জাতীয় মুকুট ফিরে এনেছেন। নতুন ইতিহাস গড়ার প্রত্যাশা অনেক। তাঁর লড়াই ও সাফল্য দেশের অ্যাথলেটিক্সে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে।