বাংলা সিনেমার মতো এক কাহিনী যেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের সঙ্গে ঘটেছে। যেমন সিনেমায় দুর্ঘটনার পর নায়কের চেহারা বদলে যায়, কিন্তু তার গান, কথা, স্মৃতি অপরিবর্তিত থাকে; তেমনই মিরপুরের উইকেটও চেহারা বদলেছে, কিন্তু তার স্বভাব অপরিবর্তিত।
কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার যে ধূসর উইকেট ছেড়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে এবার কাজ করেছেন উইকেট বিশেষজ্ঞ টমি হেমিং। তিনি সেই উইকেটকে ‘প্লাস্টিক সার্জারি’ করে কালো ও চটকদার মাটি ব্যবহার করে নতুন রূপ দিয়েছেন। যদিও নতুন রূপ পেয়েছে, উইকেটের চরিত্র আগের মতোই—স্বল্প রানের, স্পিনারদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ এবং বল এখনও মাঝে মাঝে লাফায়। তবে হেমিং-এর কাজের একটি ছোট পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে—পেসাররা এখন কিছুটা বাউন্স পেতে পারেন।
বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের ফলাফলই বোঝাচ্ছে, নতুন চেহারা এসেছে, কিন্তু স্বভাব বদলায়নি। বাংলাদেশের ইনিংস ২০৭ রানে শেষ হয়, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিনজন স্পিনার ৩০ ওভারে মাত্র ৯৩ রান দিয়েছেন। ১৮০ বলের মধ্যে ১১৬টি ডট বল দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কার্যত আটকে দিয়েছেন। স্পিনারদের এই ধারাবাহিকতা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, শেষ পর্যন্ত তারা ১৩৩ রানে অলআউট হয়।
ম্যাচের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শেই হোপ বলেছেন, “উইকেট কঠিন ছিল। তবে বাংলাদেশের স্পিনাররা ধারাবাহিকভাবে চমৎকার বোলিং করেছে। আমরা স্পিনে তেমন সুবিধা নিতে পারিনি।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ স্পিনার রিশাদ বলেছেন, “উইকেট নয়, জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্যও উইকেট একই ছিল, আর আমরা সেই অনুযায়ী খেলে ম্যাচে নিজেদের পরিকল্পনা অনুসরণ করেছি। ব্যাটাররা সময় নিয়ে খেলে, পরিস্থিতি বুঝে রান করেছে। এতে আমাদের খেলোয়াড়রা উইকেটকে ভালোভাবে রিড করতে পেরেছে।”
বাংলাদেশের ব্যাটাররা ধৈর্য ধরেছিলেন। কোনো তাড়াহুড়ো হয়নি, জানতেন কিভাবে উইকেটের সঙ্গে খেলে ভালো রান সংগ্রহ করতে হয়। রিশাদের মতে, এই কৌশলই শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের মুখ দেখিয়েছে।
মিরপুরের উইকেটের নতুন চেহারা যেমন রহস্যময়, তেমনই বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিং কৌশল দেখাল যে—চেহারা বদলাতে পারে, কিন্তু পরিকল্পনা, ধৈর্য ও দক্ষতা সবসময়ই জয় নিশ্চিত করে।

