বিশ্বজুড়ে মানুষের খাদ্যতালিকায় এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার বা আলট্রা প্রসেসড ফুড ঢুকে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, এসব খাবার দীর্ঘমেয়াদি রোগ, স্থূলতা ও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সম্প্রতি ৪৩ জন আন্তর্জাতিক পুষ্টিবিদ নতুন একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, খাদ্য ব্যবসায়ীরা অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রচারণা চালিয়ে বিপুল মুনাফা করছে, আর সাধারণ মানুষ তার প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যেই। গবেষণায় ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাহায্য নেওয়া হয়েছে, এবং এটি ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, ১৯৬২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত খাদ্যশিল্পের মুনাফা ২.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর অর্ধেক এসেছে ঠিক এই অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে। মূলত নামী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা থেকে এই মুনাফা এসেছে।
বিবিসি জানাচ্ছে, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের উদাহরণ হিসেবে পাউরুটি, চিপস, কেক, বিস্কুট, কোল্ড ড্রিংকস, সসেজ, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, আইসক্রিম ইত্যাদি। এগুলো প্রকৃতিতে থাকা উপাদান যেমন সবজি, মাছ বা মাংসকে তেল, মসলা বা অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয়, আর এরপর প্রসেসিং করে রেডি-মিল আকারে রেস্তোরাঁ বা বাজারে বিক্রি করা হয়।
ব্রাজিলের সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কার্লোস মন্টেইরো বলেছেন, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। বড় ও প্রভাবশালী খাবারের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এই খাবারের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে উচ্চ মুনাফা বজায় থাকে।
ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার অধ্যাপক ব্যারি পপকিন জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো ভুট্টা, গম, মটরশুঁটি ইত্যাদিকে স্বাদহীন ও বর্ণহীন করে ফেলে, এরপর কৃত্রিম স্বাদ ও আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদান যুক্ত করে মুনাফা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। তারা চাইছে সরকারি বিধিনিষেধ এ ধরনের খাবারের ওপর না আসে এবং তাই প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে পুষ্টিবিদদের প্রভাবিত করার জন্য।
সংক্ষেপে বলা যায়, স্বাদে লোভনীয় হলেও এই অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

