অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ও অতিরিক্ত ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।
প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ৯৬ হাজার রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৪১ শতাংশ আইসিইউ রোগীর ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হয়নি। সব মিলিয়ে ৭ শতাংশ রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী প্যান-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্স (পিডিআর) পাওয়া গেছে। এই তথ্য স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারক, চিকিৎসক ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা বহন করছে।
গত শতকের বিশের দশকে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানে যুগান্তর সৃষ্টি করেছিল। এটি শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাহীন মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অস্ত্রোপচার, কাটাছেঁড়া বা অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জীবন বাঁচাতে অ্যান্টিবায়োটিক অপরিহার্য।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা কমে আসছে, ফলে জীবাণু ও অণুজীব অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় চরম ক্ষমতাধর এসব জীবাণুকে ‘সুপারবাগ’ বলা হয়, যা বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের প্রধান উদ্বেগের কারণ।
বাংলাদেশের মতো জনবহুল এবং স্বাস্থ্যসেবায় সীমাবদ্ধ একটি দেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি অনেক বেশি। নীতিমালা না থাকায় পাড়ার ফার্মেসিতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নেন, আবার কিছু চিকিৎসকও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এই অপ্রয়োজনীয় ও অতিব্যবহার জীবাণুকে প্রতিরোধী করে তুলছে।
কৃষি, গবাদিপশু, মুরগি, ডিম ও মাছ উৎপাদনেও নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে খাদ্যের মাধ্যমে মানুষে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করছে এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। তাই খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
আইইডিসিআরের গবেষকেরা জানিয়েছেন, আন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) দেশের জন্য সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী এক দশকের মধ্যে চিকিৎসা খাতে সংকট দেখা দেবে। তবে স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতার বড় ঘাটতি রয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমানোই এই ঝুঁকি প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।
সতর্কবার্তা অনুযায়ী, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রির কঠোর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ফার্মেসি তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা এবং গবাদিপশু, মাছ, মুরগি উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিকের ঢালাও ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন।

