গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর লন্ডনে প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ এমপির মন্তব্য— ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ নেই, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার’।
ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের অভিযোগ এনেছেন। সোমবার, ১৪ এপ্রিল ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমে বিচার চালাচ্ছে।
টিউলিপ জানান, তার আইনজীবীরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়েছেন কিন্তু কোনো উত্তর পাননি। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন—আমি এই ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার নিয়ে কিছু বলতে চাই না।” তিনি আরও বলেন, “আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ নেই। তাই এই প্রচার আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরাধী প্রত্যর্পণের নিয়ম রয়েছে। একটি দেশ চাইলে অন্য দেশ থেকে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিচারের জন্য ফেরত চাইতে পারে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ২বি শ্রেণির প্রত্যর্পণ দেশের তালিকায় রেখেছে। এর মানে হলো, টিউলিপকে যদি ফেরত পাঠানো হয়, তবে তার আগে বাংলাদেশকে আদালতে শক্ত প্রমাণ দেখাতে হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র বলেছেন, তিনি কোনো ব্যক্তিগত মামলার বিষয়ে মন্তব্য করবেন না।
টিউলিপের আইনজীবীরা রোববার জানান, গত কয়েক মাসে দুদক বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। আইনজীবী প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউড এক বিবৃতিতে বিবিসিকে জানায়, এই অভিযোগগুলো পুরোপুরি মিথ্যা। তারা লিখিতভাবে এর জবাব দিয়েছেন।
দুদক বলছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তারা তদন্ত চালাচ্ছে। অভিযোগ অনুযায়ী, অবকাঠামো খাত থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই তদন্ত শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার বিরোধী রাজনীতিক ববি হাজ্জাজের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ববি হাজ্জাজ অভিযোগ করেছেন—২০১৩ সালে টিউলিপ সিদ্দিক রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হয়। তবে এতে খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেশি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বিবিসিকে বলেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন নয়। তিনি জানান, তদন্ত চলছে প্রমাণের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক যেন আদালতের কার্যক্রম থেকে দূরে না থাকেন। তিনি আরও বলেন, টিউলিপ যদি আদালতে এসে আইনি সহায়তা নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চান, তাহলে দুদক তা স্বাগত জানাবে।
বছরের শুরুতে টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস। তদন্তের পর টিউলিপ তার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। স্যার লরি তার প্রতিবেদনে জানান, তিনি কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাননি।
এদিকে দুদক টিউলিপের বিরুদ্ধে জমি গ্রহণ সংক্রান্ত অভিযোগও খতিয়ে দেখছে। এই তদন্ত তার খালা শেখ হাসিনার সরকারের সময়কার দুর্নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত আগস্টে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট এলাকার এমপি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ট্রেজারির অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ, তার বিরুদ্ধে এ সপ্তাহেই একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।