সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের একতরফা পদক্ষেপে সিন্ধু পানিচুক্তি কার্যত স্থগিত হওয়ায় পাকিস্তানের দিকে পানি প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে ভারত। এর প্রভাব পড়েছে চেনাব নদীতে, যা এখন প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার পথে। সূত্র: দ্য ডন
মঙ্গলবার (৬ মে) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি স্থগিতের এক সপ্তাহ পর, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত হঠাৎ করেই চেনাব নদী দিয়ে পানি ছেড়ে দেওয়ার মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়। সোমবার সকালে পাকিস্তানের মাড়ালা হেডওয়ার্কসে মাত্র ৩,১০০ কিউসেক পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়, যেখানে আগের দিন রোববার ছিল ৩৫,০০০ কিউসেক।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব সেচ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “ভারত চেনাবের পানি প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে এবং সেটি তাদের নিজস্ব ড্যাম ও বিদ্যুৎ প্রকল্পে জমা করছে। এটি স্পষ্টভাবে সিন্ধু পানি চুক্তির লঙ্ঘন।”
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চেনাব নদী অববাহিকায় ভারতের রয়েছে তিনটি বড় পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প: ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাকাল ডুল ড্যাম, ৯০০ মেগাওয়াটের বাগলিহার ড্যাম এবং ৬৯০ মেগাওয়াটের সালাল ড্যাম। এসব বাঁধে পানি জমিয়ে রাখার কারণে পাকিস্তানে পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি ভারত এভাবে পানি আটকে রাখে, তাহলে আগামী ৪–৫ দিন পাকিস্তান কার্যত পানিশূন্য অবস্থায় থাকবে। আবার হঠাৎ করে পানি ছাড়া হলে চেনাব নদীতে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি তৈরি হবে, যা নদীর তীরবর্তী জনপদে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মাড়ালা হেডওয়ার্কসের ধারণক্ষমতা যেখানে ১১ লাখ কিউসেক, সেখানে ভারতের তিনটি বাঁধ মিলিয়ে প্রায় ১৩ লাখ একরফুট পানি ধারণের সামর্থ্য রয়েছে। তবে জম্মু-তাবি ও মুনাওয়ার-তাবি নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহে ভারত হস্তক্ষেপ করতে পারে না, বলেও জানান তিনি।
চেনাব নদী পাকিস্তানের সেচব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পানির ওপর নির্ভর করে ইউসিসি ও বিএরবি খালসহ পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
পাকিস্তানের পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ওয়াপদা) প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, সোমবার চেনাব নদীতে প্রবাহ মাত্র ৫,৩০০ কিউসেকে নেমে আসে এবং সেই পানি থেকেও কোনো প্রবাহ ছেড়া হয়নি। অথচ আগের দিন ইনফ্লো ছিল ৩৪,৬০০ কিউসেক এবং আউটফ্লো ছিল ২৫,৪০০ কিউসেক।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, কেননা সিন্ধু পানি চুক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় শান্তিপূর্ণ সমঝোতার অন্যতম নিদর্শন ছিল।