রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কিছু “সমঝোতায়” পৌঁছানো গেছে। তবে তিনি এখনো স্পষ্ট করেননি, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসবেন কিনা।
তিয়ানজিনে পুতিনের বক্তব্য
চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পুতিন। সেখানে তিনি আবারও পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দায়ী করেন। তার ভাষায়, “এই সংকট রাশিয়ার আক্রমণ দিয়ে শুরু হয়নি, বরং পশ্চিমা সমর্থিত অভ্যুত্থানের কারণেই ইউক্রেনে যুদ্ধের আগুন জ্বলেছে।”
পুতিন আরও বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় হওয়া বৈঠকে যে সমঝোতা হয়েছে, সেটি শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার আশা জাগাচ্ছে। তবে এ কথার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তিনি দেননি।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাব
আলাস্কা বৈঠকের পর ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, পুতিন নাকি ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছেন। যদিও মস্কো এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
ট্রাম্প নিজেও বারবার বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রশ্নই উঠবে না। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যৌথভাবে ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দেবে, যা কার্যত ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫–এর মতো শর্ত তৈরি করবে।
জেলেনস্কি আশা করছেন, এ নিশ্চয়তার একটি লিখিত কাঠামো শিগগিরই প্রকাশ পাবে।
পশ্চিমা চাপ ও মস্কোর সমালোচনা
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, ট্রাম্প পুতিনকে সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন শান্তি আলোচনায় বসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। তবে রাশিয়া পশ্চিমা প্রস্তাবগুলোকে “একপেশে” ও “রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার কৌশল” হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এরই মধ্যে রাশিয়া আবারও ইউক্রেনে ব্যাপক আকাশ হামলা চালিয়েছে। গত সপ্তাহে কেবল একদিনেই কিয়েভে ৬০০-এর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, যাতে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হন। ইউরোপীয় নেতারা এর তীব্র নিন্দা জানালেও, মস্কো তাদের অবস্থান বদলাতে রাজি হয়নি।
সম্মেলনে পুতিন চীন ও ভারতের নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বেইজিং ও নয়াদিল্লির প্রচেষ্টা ইউক্রেন সংকট সমাধানে সহায়ক হচ্ছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করছে, রুশ জ্বালানি কেনার মাধ্যমে চীন ও ভারত মস্কোর যুদ্ধ অর্থনীতি টিকিয়ে রাখছে।
যুদ্ধ শেষের সম্ভাবনা কতটা?
ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, চাইলে তিনি “একদিনেই” ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত শুধু আল্টিমেটাম আর সময়সীমার কথাই শোনা যাচ্ছে, বাস্তবে কোনো চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি হয়নি।
অন্যদিকে, জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কোনো “বাফার জোন” বা ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার মতো চুক্তিতে তিনি রাজি হবেন না। তার ভাষায়, মস্কো প্রকৃত শান্তির জন্য প্রস্তুত নয়, বরং সময় টানার কৌশল নিচ্ছে।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক কিছু আশার আলো দেখালেও, ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তব চিত্র এখনো রক্তক্ষয়ী হামলা, ধ্বংস আর রাজনৈতিক দোলাচলেই আটকে আছে।

