ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ঠেকাতে নতুন কৌশল নিয়েছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু প্রশাসন এবার পশ্চিম তীরের কিছু অংশ স্থায়ীভাবে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্নকে কার্যত কবর দেবে।
রোববার বার্তা সংস্থা এএফপি ও মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি নেতানিয়াহুর সরকার পশ্চিম তীরে নতুন একটি বসতি স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। জেরুসালেমের পূর্বাঞ্চলে নেওয়া এই বড় উন্নয়ন প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘ই১’।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পশ্চিম তীর কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এর একটি অংশ স্থায়ীভাবে ইসরায়েলের দখলে চলে যাবে।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ এ প্রসঙ্গে বলেন, “এই উদ্যোগ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের চিন্তাধারাকে কবর দেবে।” নিজেও একজন অবৈধ বসতিতে বসবাসকারী সেটলার স্মৎরিচ আরও দাবি করেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা বানচাল করতে পশ্চিম তীরের অংশ ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য।
চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। সৌদি আরব ও ফ্রান্স এ সম্মেলনের সহ আয়োজক। এর আগে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’আর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া “একটি মারাত্মক ভুল।” তিনি আরও বলেন, যারা এই উদ্যোগ নেবে, তাদের বিরুদ্ধে একপাক্ষিক ব্যবস্থা নেবে ইসরায়েল।
গত ৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ ৮০ কর্মকর্তার ভিসা বাতিল করে। ফলে তারা নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে শান্তি প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করার অভিযোগ এনে এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা দেখান।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর জানিয়েছিলেন, আব্বাস প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। তবে হঠাৎ ভিসা খারিজের ঘটনায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
বর্তমানে পশ্চিম তীরে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ ইসরায়েলি অবৈধ বসতিতে বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ।
এর আগে ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেম ও গোলান মালভূমি দখল করে। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে এসব কৌশলগত এলাকা দখল করেছিল দেশটি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনো এসব দখলকে অবৈধ বলে মনে করে।
পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে জর্ডান। দেশটির রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো ইসরায়েলি পদক্ষেপ জর্ডান প্রত্যাখ্যান করবে। একইসঙ্গে গাজার ভবিষ্যৎ ঘিরে এমন কোনো পরিকল্পনা হলে তাও মেনে নেবে না দেশটি।

