নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের জেরে সহিংসতা চরমে পৌঁছায়। উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কাঠমান্ডুসহ তিন জেলায় কারফিউ জারি করেছে দেশটির প্রশাসন। সোমবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং।
দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন অফিস রিং রোডের ভেতরের সব এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করেছে। কারফিউ বল্কুমারী ব্রিজ, কোটেশ্বর, সিনামঙ্গল, গাউশালা, চাবাহিল, নারায়ণ গোপাল চৌক, গঙাবু, বলাজু, স্বয়ম্ভূ, কালাঙ্কি, বলখু এবং বাগমতী ব্রিজসহ পুরো রিং রোড এলাকায় কার্যকর হবে।
ললিতপুর জেলা প্রশাসনও একই দিনে সকাল ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করে। জেলা প্রশাসক সুমন ঘিমিরে জানান, এই নির্দেশ ললিতপুর মহানগরীর ২, ৪, ৯, ১৮ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশে প্রযোজ্য। এসবের মধ্যে ভৈসেপাটি, সানেপা ও চ্যাসাল এলাকা অন্তর্ভুক্ত।
ভক্তপুর জেলা প্রশাসনও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করেছে। জেলা প্রশাসক নামরাজ ঘিমিরে জানান, নিষেধাজ্ঞা মাধ্যপুর ঠিমি, সূর্যবিনায়ক, চাঙ্গুনারায়ণ এবং ভক্তপুর পৌরসভায় কার্যকর থাকবে।
প্রশাসনের নির্দেশে কারফিউ এলাকায় সব ধরনের চলাচল, জমায়েত, মিছিল ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। স্থানীয় প্রশাসন আইন, ১৯৭১-এর ধারা ৬(৩) অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার রাতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং ঘোষণা দেন, ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্মের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং সহিংসতা তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের কথা জানান। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সরকারি নিবন্ধনের নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সরকার ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দেয়। নির্ধারিত সময় পার হলেও কোনো প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন না করায় ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬টি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ হয়।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয় তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত শিক্ষার্থীরা। ৪ সেপ্টেম্বর থেকেই তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। রবিবার বিক্ষোভ শুরু হয়, আর সোমবার তা সহিংস রূপ নেয়। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভ হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রী অলির পদত্যাগের দাবিও ওঠে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী জানান, এক্স নেপালে নিবন্ধন করবে না বলে জানিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা প্রায় দেড় বছর ধরে এসব প্ল্যাটফর্মকে নিবন্ধিত হতে বলেছি। এটি জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিষয়।”

